সুলয়া সিংহ ও শুভজিৎ মণ্ডল: একুশের আগে বিভিন্ন রকম পারিপার্শ্বিক চাপে বেশ বেকায়দায় তৃণমূল (TMC)। একের পর এক নেতামন্ত্রীদের দলত্যাগ, রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া, কেন্দ্রের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিকভাবে এরাজ্যের শাসকদলের উপরে চাপ সৃষ্টি, এবং সর্বোপরি ধর্মীয় মেরুকরণে বিজেপির মরিয়া চেষ্টা। আপাত দৃষ্টিতে রাজ্যের ক্ষমতায় ফেরা বেশ কঠিন মনে হলেও তৃণমূলের আত্মবিশ্বাসে একেবারেই চিড় ধরেনি। আর তার অন্যতম একটি কারণ হল শহর কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় দলের সংগঠন। তৃণমূল কংগ্রেসের বিশ্বাস, রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তে যতই কঠিন লড়াই হোক, কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনায় এখনও তারাই একচ্ছত্র অধিপতি। এই এলাকাগুলিতে বিজেপি এখনও পোক্ত সংগঠন গড়ে তুলতে পারেনি। সম্প্রতি দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষাতেও সেই তথ্যই উঠে এসেছে।
বস্তুত, বাংলার নির্বাচনের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, শহর কলকাতার রাশ যখন যাদের হাতে থেকেছে, রাজ্যের শাসন ক্ষমতাও তারাই ভোগ করেছে। সেই কংগ্রেস আমল থেকেই এটা পরীক্ষিত সত্য। বাম আমলেও শহর কলকাতা তথা বৃহত্তর কলকাতা লালেই আস্থা রেখেছিল। দু’একটা ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনায় যারা বেশি আসন জিতেছে তারাই রাইটার্স বা নবান্ন দখল করেছে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, একুশেও তেমনটাই হতে চলেছে। শহর কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনাই তৃতীয়বারের জন্য নীলবাড়ি দখলের অনেকটা কাছে পৌঁছে দেবে তাদের। ইন্টেলিজেন্স সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, তৃণমূলের অভ্যন্তরের সমীক্ষা বলছে, শহর কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনার বেশিরভাগ আসন তারাই জিততে চলেছেন। বিশেষ করে কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিজেপি দাঁতই ফোটাতে পারবে না। দলের সমীক্ষা বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ৩১টি আসনের ৩১টিতেই জয়ের মতো জায়গায় আছে শাসক দল। শহর কলকাতার ১১টি আসনেও কমবেশি একই পরিস্থিতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেভাবে লড়াইয়েই নেই বিজেপি। উত্তর ২৪ পরগনার ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও লড়াই থাকলেও, সিংহভাগ আসনে জয় পাবে তৃণমূলই।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ বিধানসভাতেও এই তিন জেলায় কার্যত ক্লিন সুইপ করেছিল তৃণমূল। ৭৫টি আসনের মধ্যে ৬৭ টিতেই জয়ী হয়েছিল রাজ্যের শাসকদল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টির মধ্যে ২৯, উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টির মধ্যে ২৭ টি এবং কলকাতার ১১টি আসনেই জিতেছিল তৃণমূল। ২০১৯ লোকসভাতে প্রবল মোদি (Narendra Modi) হাওয়ার মধ্যেও কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সবকটি আসন দখলে রেখেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের (Mamata Banerjee) দল। একুশের আগে সেটাই আসল ভরসার জায়গা তৃণমূলের। যদিও, উত্তর ২৪ পরগনায় লোকসভাতে ভাল লড়াই দিয়েছে বিজেপি। ৫টির মধ্যে ২টি আসন নিজেদের দখলেও রেখেছিল তারা। তবে, লোকসভায় নাগরিকত্ব ইস্যুতে মতুয়াদের ভোটের একটা বড় অংশ গিয়েছিল বিজেপি শিবিরে। যার ফলে বনগাঁ আসনটি তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। কিন্তু বিধানসভায় সেটা হবে না বলেই তৃণমূলের অন্দরের সমীক্ষায় দাবি। সব মিলিয়ে, দুই ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় গতবারের প্রায় সমান আসনই প্রত্যাশা করছে তৃণমূল। শাসক শিবিরের নেতারা বলছেন, কলকাতা হোক বা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, গেরুয়া শিবিরের তেমন নেতা কই? যে শোভন চট্টোপাধ্যায়য়ের আশা বিজেপি করেছিল, তিনিও তো নিস্ক্রিয়। মুকুল রায়ও সেভাবে মাঠে নেমে রাজনীতি করছেন না। তাহলে তৃণমূলকে আটকাবে কে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.