সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দলীয় সভায় হামলা চালিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতিকে খুনের অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে৷ পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের বরাবাজারে শনিবার রাতে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বিজেপির বাইক বাহিনীর তাণ্ডবে খুন হন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আদিত্য সিং মল্ল (৫২)।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার রাতে বরাবাজারের রাজাপাড়ায় দলের ব্লক যুব কার্যালয়ে প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন ওই ব্লকের যুব সভাপতি৷ সেই বৈঠকে ছিলেন ওই প্রাক্তন ব্লক সভাপতিও৷ তাঁর ছেলে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী প্রসেনজিৎ সিং মল্লকে মারধর করার সময় তাঁর বাবা আদিত্যবাবু রুখে দাঁড়ান৷ বাধা পেয়ে তাঁকেও ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ৷ এছাড়া কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন৷ তাঁর বুকে বিজেপির কর্মীরা লাথি মারলে তিনি মাটিতে পড়ে গুরুতর চোট পান বলে অভিযোগ৷ সঙ্গে-সঙ্গে তাঁকে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ রবিবার দুপুরে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান৷
ওইদিন রাতে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বিজেপির ওই বাইক বাহিনী তৃণমূলের দুটি কার্যালয়েও ভাঙচুর করে৷ হামলা চালায় এক তৃণমূলকর্মীর বাড়িতেও৷ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছালে তারাও বিজেপির ওই বাইক বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হন৷ জখম হন বরাবাজার থানার দুই পুলিশ কর্মী৷ এই ঘটনায় তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে মোট পাঁচ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে বরাবাজার থানার পুলিশ। ওই ধৃত পাঁচ জনের মধ্যে জনার্দন সিং মোদক ও চন্দন কৈবর্ত বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি প্রার্থী৷ রবিবার তাঁদেরকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে, ধৃতদের ১৪ দিন বিচারাধীন হেফাজত হয়৷ পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, “তৃণমূল-বিজেপির একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মামলা রুজু করা হয়েছে৷ একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি৷ তদন্ত চলছে৷’’ এদিকে ঘটনাস্থল থেকে বরাবাজার থানার পুলিশ পাঁচটি মোটর বাইক-সহ লোহার রড, ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা বাজেয়াপ্ত করেছে৷
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার রাতে বরাবাজারের রাজাপাড়ায় দলের ব্লক যুব কার্যালয়ে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে একটি সভা শেষে অসুস্থ প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আদিত্য সিং মল্লকে তাঁর ছেলে তথা পঞ্চায়েত প্রার্থী প্রসেনজিৎ সিং মল্ল বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেইসময় ঝাড়খণ্ড থেকে প্রায় ছ’টি বাইকে আসা পনেরো-আঠারো জন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে তৃণমূল প্রার্থী প্রসেনজিৎ সিং মল্লকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারার চেষ্টা করলে তার বাবা আদিত্যবাবু বাধা দেন৷ তখন তাঁর বুকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ৷ তারপরই দলের কার্যালয়ে থাকা পোস্টার, ব্যানার, কাট আউট ছিঁড়তে থাকে। এই অবস্থায় বাকি তৃণমূলকর্মীরা বেরিয়ে এলে তারা বাইক ছেড়ে পিছু হঠে। সঙ্গে-সঙ্গে সেখান থেকে তৃণমূলকর্মীরা বরাবাজার থানায় ফোন করেন৷ এদিকে ওই হামলাকারীরা নামোপাড়ায় দলের ব্লক কার্যালয়ে গিয়েও হামলা চালায়। সেখানেও বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী সন্তোষ চট্টোপাধ্যায় সহ একাধিক নেতা-কর্মী বৈঠক করছিলেন। বিজেপির কর্মীদের লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে আচমকা হামলায় তারা কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচে। ওই কার্যালয়ের পাশে দলের কর্মী রাখাল নামাতার বাড়ির সামনেও হামলা চালিয়ে পতাকা, কার্ট আউট ছিঁড়ে দেয় বলে অভিযোগ। সেখান থেকে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “বরাবাজারে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা দেখে বিজেপি আতঙ্কিত। তাই এভাবে সন্ত্রাস চালানোর চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষ এর জবাব ব্যালটে দেবেন।” তবে হামলায় তৃণমূল নেতার মৃত্যুর কথা অস্বীকার করেছে বিজেপি। পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “প্রচারকে কেন্দ্র করে এই ঝামেলা হয়। যিনি মারা গিয়েছেন তিনি আগে থেকেই হাসপাতালে ভরতি ছিলেন।” এদিকে এই ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা বরাবাজারে। বিজেপির ওই বাইক বাহিনী বরাবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়ণপুর, পাততোড়িয়া, মতিরামডি এলাকার তৃণমূল কর্মীদের হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ৷
ছবি- অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.