সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “দলের জন্য নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, অশান্তি করবেন না। নিজের দলের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন, সেই জোরও করব না। যে কাজ করেছেন ভোট তাঁকেই দেবেন”, বুধবার পুরুলিয়ায় ভোটপ্রচারে গিয়ে সদর্পে বললেন দেব। এদিকে টলিপাড়ার ‘খোকাবাবু’কে পেয়ে উচ্ছ্বসিত কাশীপুর কেন্দ্রের মানুষেরা।
এদিন তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর সমর্থনে পুরুলিয়ার কাশীপুরে প্রচারে যান দীপক অধিকারী ওরফে দেব। টলিউড সুপারস্টারকে দেখতে ভিড় হবে এটাই স্বাভাবিক। আর সেই জনপ্লাবন দেখে আপ্লুত তৃণমূলের তারকাপ্রার্থীও। তাই রোড শো শেষে হেলিকপ্টারে ওঠার আগে কাশীপুরের সেবাব্রতী সংঘের মাঠে অস্থায়ী হেলিপ্যাডে মাইক্রোফোন দেবকে বলতে শোনা যায়, “দুপুর ২টোতেও এত ভিড়। চারপাশে মানুষ। পুরুলিয়া তো জিতে গিয়েছে দেখেই মনে হচ্ছে। এবার আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন। আমি যাতে ঘাটালে জিততে পারি। দলের জন্য নিজেদের মধ্যে ঝামেলা, অশান্তি করবেন না। দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে জোরও করব না। তবে আমি এখানে এসেছি,অবশ্যই আশা করব। সব ভোট তৃণমূলেই পড়বে।”
দেবের কথা শেষ হতেই স্টেডিয়ামজুড়ে চিৎকার! সকলেই যেন একসুরে সম্মতি দিলেন সুপারস্টার প্রার্থীর কথায়। এদিন ভরদুপুরে প্রায় ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় দেবকে ঘিরে যে ভিড় দেখল কাশীপুর, তা যেন ‘গেরুয়া গড়’ হিসবে পরিচিত এই এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জন্য একেবারে চাঙ্গায়নী টনিকের মতো কাজ করল। ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থীর প্রচার শেষে দলের নেতা কর্মীরা, রীতিমতো খাতা-কলম নিয়ে প্রতিটা অঞ্চল ধরে ধরে কার্যত লিডের অঙ্ক কষলেন। আক্ষরিক অর্থেই কাশীপুরে এদিন ঝড় তুলে দিলেন ‘খোকাবাবু’।
বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ দেব কাশীপুরের সেবাব্রতী সংঘের মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নামেন। তারপর সেখান থেকেই তাঁর রোড শো চলে। রাজবাড়ি মোড় হয়ে কাশীপুর বাজার পরিক্রমা করে ফের সেবাব্রতী সংঘের মাঠেই শেষ হয় তাঁর রোড শো। ৩ কিমি. এই রোড শোতে রাস্তার দু’পাশেই ছিল জনতার ঢেউ। আট থেকে আশি ভীড় করেছিল দেবকে দেখতে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল তরুণী থেকে মধ্যবয়স্কা মহিলাদের। প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোকে নিয়ে দেবের গাড়ি যত এগিয়েছে ততই যেন জনস্রোত দেখেছেন ঘাটালের প্রার্থী। কিন্তু কাউকে নিরাশ করেননি তিনি। দু’পাশ থেকে অটোগ্রাফের যত অনুরোধ এসেছে, তিনি তা মিটিয়েছেন। এক ভক্ত দেবের ছবি এঁকে তাঁকে উপহার দেন। ওই ছবিতেই দেব অটোগ্রাফ দিয়ে আবার তাঁকে ফিরিয়ে দেন। এখানেই শেষ নয়। অভিভাবকের কোলে চেপে এক শিশু ‘খোকাবাবু’র গলায় মালা পড়াতে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেই মালা তিনি ওই শিশুর গলায় পরিয়ে দিয়ে তাঁকে আদর করেন। এই টুকরো টুকরো ছবি কাশীপুরকে একেবারেই মাতিয়ে দেয়।
দূর থেকে ঘাটালের প্রার্থীকে শুধু মোবাইলবন্দি নয়। জনতার ভিড়ের মাঝেই সেলফি তোলারও হিড়িকও চোখে পড়ে। প্রচার শেষে খানিকটা যেন স্বস্তির ছাপ পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা কাশীপুরের বাসিন্দা সৌমেন বেলথরিয়ার। গত লোকসভার পর থেকেই এই এলাকা ‘সবুজ গড়’ থেকে গেরুয়া গড়ে পরিণত হয়। একুশের ভোটে হারতে হয় তাঁর বাবা তথা রাজ্য তৃণমূলের সম্পাদক স্বপন বেলথরিয়াকে। এদিনের ভিড় যেন সেই ছবিটার বদল ঘটাল। একথা যে শুধু ঘাসফুল শিবির বলছে তা নয়! রাজনৈতিকমহল থেকে এখানকার মানুষজনদের কথাতেও এমন আভাস মিলেছে। দেবের কথায়, “পুরুলিয়ার মতো আমার ওখানেও ওরা টাকা ছড়াচ্ছে। কিন্তু আজকাল মানুষজন বুঝে গিয়েছেন। এখন আর টাকা দিয়ে ভোট কেনা যায় না। কাজ দিয়ে উন্নয়ন দিয়ে, ভোট হয়। ওরা শুধু ধর্মের কথা বলে। কোনও কাজের কথা বলে না।”
অফ হোয়াইট গোল গলা টি শার্ট। গলায় সাদা ধবধবে উত্তরীয়। চোখে রোদ চশমা। হাতে সাদা ব্যান্ডের স্মার্ট ওয়াচ। এক কথায় ‘কেয়ারলেস বিউটি’ এই পোশাকে শুধু তাঁর ভক্তদের নয় । কাশীপুরের সব বয়সের মানুষদেরই যেন মন জিতে নেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.