সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: কর্মসূচি মেনে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রবিবার জেলায়-জেলায় পথে নেমেছিলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।বিক্ষিপ্ত অশান্তি হলেও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মোটের উপর শান্তিপূর্ণভাবেই এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ হয়। মিছিল চলাকালীন সবচেয়ে বড় অশান্তির ঘটনা ঘটে বাঁকুড়া ও বীরভূমে। তৃণমূল-বিজেপি দুই দলের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়। আক্রান্ত হন নেতা-কর্মীরাও। বর্ধমানের খণ্ডঘোষেও বিজেপি পার্টি অফিস ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার নলহাটি দুই ব্লকের কাঁটাগড়িয়া মোড়ে জনসভায় তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু করে। তাঁদের দাবি, দলের পতাকা নিয়ে এই আন্দোলন করা যাবে না। রামপুরহাট মহকুমার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য মঞ্চ থেকে রাজনৈতিকভাবে লড়াইয়ের ডাক দেন। তাই শুনে ত্রিদিববাবুর ওপর হামলা চালায় সভায় অংশগ্রহণকারী তৃণমূল সমর্থকরা। মঞ্চ ভেঙে দেয় জনতা। উত্তেজিত জনতা রেলগেটের কাছে লাইনে, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে লাইনে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করে। যদিও ত্রিদিব ভট্টাচার্য বলেন, “কিছু ছেলে তৃণমূল সেজে আমাদের আন্দোলনকে ভন্ডুল করতে চাইছে। তারাই এই কাজ করেছে।”
অন্যদিকে ময়ূরেশ্বর দু নম্বর ব্লকের কোটাসুরের হাইস্কুলের মাঠ থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে তৃণমূল। কোটাসুরে বক্তব্য রাখছিলেন ব্লক সভাপতি নারায়ন প্রসাদ চন্দ্র। তখনই কিছু তৃণমূল সমর্থক উত্তেজিত হয়ে ছুটে এসে কোটাসুরে বিজেপির পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালায়। মোতায়েন থাকা পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায় ভাঙচুরকারীরা। তবে পুলিশ তাদের মধ্যে থেকে ৩ জনকে ধরেছে।তবে এই ভাংচুর প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, “দলীয় পার্টি অফিস ভেঙে প্রমাণ করে দিচ্ছে কারা ভারত বিরোধী।” তৃণমূলের নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্র বলেন, “আমাদের আন্দোলন ভাঙতে বিজেপির লোক আমাদের মিছিলে ঢুকে এই কাণ্ড বাধিয়েছে।”
এদিকে বিজেপির মণ্ডল কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার জয়পুরের মিছিল থেকে ওই কার্যালয়ে হামলা চালায় বলেই অভিযোগ। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ঘটনার তদন্তের দাবিতে সরব বিজেপি সাংসদ শ্যামল সাঁতরা।আবার বর্ধমানের খণ্ডঘোষে বিজেপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রবিবার বিকেলে এনআরসি বিরোধী মিছিল থেকে পোলেমপুরে বিজেপির ওই কার্যালয়ে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। তবে ততক্ষণে কার্যলয়ের ভিতরে থাকা বিভিন্ন সামগ্রী পুড়ে গিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল প্রতিবাদ মিছিল করে এসে এই হামলা করেছে। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিজেপি নিজেরাই এই কাজ করেছে তৃণমূলকে বদনাম করতে। ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয় তৃণমূল।
পূর্ব-পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, মন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। পুরুলিয়ার মানবাজার-১ ব্লকে মন্ত্রী সন্ধ্যারাণী টুডু, কাশীপুরে বিধায়ক স্বপন বেলথোড়িয়া, রঘুনাথপুরে বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি, পুঞ্চায় জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। এদিকে কলকাতায় দমদম বিধানসভা এলাকায় মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পূর্ণেন্দু বসুর নেতৃত্বে প্রতিবাদে মিছিল হয়। লেকটউন এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দেন মন্ত্রী সুজিত বসুও।একই ইস্যুতে তৃণমূল অসংগঠিত শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বনগাঁ শহরজুড়ে মিছিল করে। পাশাপাশি বাগদার নাটাবেড়িয়া বাজারে তৃণমূলের ধিক্কার মিছিল করে প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.