সম্যক খান, মেদিনীপুর: বিধায়ক বনাম ব্লক সভাপতির দ্বন্দ্ব। যার জেরে শেষপর্যন্ত সরতে হল ব্লক সভাপতিকেই। অপসারিত পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের ব্লক তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় পান। নতুন ব্লক সভাপতির দায়িত্ব নিলেন বিধায়ক শিউলি সাহা ঘনিষ্ঠ নেতা উত্তম ত্রিপাঠি। যুব নেতা উত্তমবাবুকে মাত্র ৪ মাস আগেই ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছিল। ব্লকেও তাঁর উপরই ভরসা রেখেছে দল। শুক্রবার জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর নাম ঘোষণা করেছেন।
অজিত মাইতি বলেন, ”দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে গত বৃহস্পতিবার কোলাঘাটে বৈঠক ডেকেছিলেন জেলার পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে হাজির ছিলেন বিধায়ক শিউলি সাহা এবং সঞ্জয় পানও। সেখানেই তাদের দলনেত্রীর নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হয়। ব্লক সভাপতি থেকে সরিয়ে সঞ্জয় পানকে জেলা কমিটির সম্পাদক করা হয়েছে।”
কেশপুরে সঞ্জয় পান বনাম শিউলি সাহার দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। একে অপরের সমালোচনা করতে ছাড়েননি কোনও পক্ষই। গত লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত ব্লক সভাপতি হিসেবে চুটিয়ে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করে গিয়েছেন সঞ্জয় পান। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে কেশপুর প্রায় একলাখ ভোটের লিড দিলেও তা কাজে আসেনি। পরবর্তী সময়ে সারা রাজ্যের পাশাপাশি কেশপুরেও তৃণমূলের অবনতি হয়েছে। বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বিজেপির। একটা সময় কেশপুর ব্লকে বহু পার্টি অফিসই চলে গিয়েছিল বিজেপির দখলে। আবার অনেক পার্টি অফিসে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাই ঢুকতেই ভয় পেতেন। ঘরছাড়া হয়েছিলেন বহু তৃণমূল কর্মী।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আসরে নামেন শুভেন্দু অধিকারী। সামনের সারিতে আনা হয় কিছুটা ব্রাত্য হয়ে যাওয়া নেতা মহম্মদ রফিককেও। সক্রিয় হতে শুরু করেন বিধায়ক শিউলি সাহা। তৎকালীন ব্লক যুব সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠিও হাল ধরেন। ধীরে ধীরে ফের সক্রিয় হয় তৃণমূল। বন্ধ পার্টি অফিসগুলি খুলে ফের বসতে শুরু করেন তৃনমূল নেতা,কর্মীরা। এখন কেশপুর ব্লকে বিজেপি সক্রিয় থাকলেও, তৃণমূল লড়াইয়ে ফিরে এসেছে। এসব কারণেই ক্রমশ গুরুত্ব হারিয়ে ফেলতে থাকেন সঞ্জয় পান। পাশাপাশি বিধায়কের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই তো ছিলই। শোনা যায়, একসময় সঞ্জয় পানের আপত্তিতেই জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্বেও দলের তরফে কেশপুরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল শিউলি সাহার। এবার তাঁরই অনুগামী সভাপতি হওয়ায় মোক্ষম জবাব বলেই মনে করা হচ্ছে।
যদিও সাংবাদিক বৈঠকে জেলা সভাপতি অজিতবাবু বলেছেন, ”অনেকদিন আগে থেকেই সঞ্জয়বাবু ব্যক্তিগত কারনে দলের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে রেখেছেন। টানা সাত বছর দায়িত্বে থাকার পর তিনি আর থাকতে চাইছিলেন না। তাই তাঁকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর অভিজ্ঞতাকে জেলা কমিটিতে কাজে লাগাবে দল।” এর পাশাপাশি নতুন সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠিকে কেশপুরের বুকে আরও বেশী করে সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.