বিক্রম রায়, আলিপুরদুয়ার: ঘরে রান্নার গ্যাস নেই। উজ্জ্বলা যোজনায় বারবার আবেদন করেও গ্যাস মিলছে না। যাঁদের বাড়িতে গ্যাস আছে, তাঁদেরও ৮৫৬.৪০ টাকা দিয়ে ১৫ কেজির একটি গ্যাস সিলিন্ডার কেনার আর্থিক সামর্থ নেই। ফলে জঙ্গলে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করাই একমাত্র ভরসা বন বসতিবাসীদের। নাহলে ঘরের উনুন জ্বলবে না। ভাতও ফুটবে না। অথচ জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আইন ভেঙে জঙ্গলে ঢুকে পরপর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে ডুয়ার্সে। গত পাঁচদিনে চারজন হাতির হামলায় মারা গিয়েছেন। তারপরই এই মৃত্যুর ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিজেপি সাংসদ ও বিধায়করা। আসরে নেমেছে তৃণমূল। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রের প্রকল্প নিয়ে প্রচার করেন বিজেপি নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর উজ্জ্বলা যোজনা নিয়ে ফলাও প্রচারও করেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্ব। কিন্তু সেই প্রকল্প কতটা বাস্তবে পেলেন এইসব এলাকার বাসিন্দারা? সেই বিষয়ে এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা প্রায় সকলেই এক বাক্যে না বলবেন। উজ্জ্বলা যোজনায় রান্নার গ্যাস তাঁদের ঘরে যায়নি। সে কারণেই জ্বালানির জন্য বনের মধ্যে যেতে হয় এই প্রান্তিক এলাকার বাসিন্দাদের।
আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা অবশ্য বলেন, “যাঁরা গরিব মানুষ তাঁদের সকলেরই উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস পাওয়ার কথা। আমি বর্তমানে দিল্লিতে আছি। ফিরে গিয়ে হাতির হামলায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি যাব। কেন তাঁরা উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস পাচ্ছেন না, তার খোঁজ নেব। তবে হাতির হামলায় পরপর এই মৃত্যুর জন্য দায়ী বনদপ্তর।” সাংসদ যাই বলুন, গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরের কর্মীরা কিন্তু অন্যরকম কথা বলছেন। আলিপুরদুয়ার গ্যাস সার্ভিসের কর্মী টিঙ্কু দাস বলেন, “গত দুই বছর থেকে উজ্জ্বলা যোজনা আমাদের রাজ্যে বন্ধ। এই প্রকল্পে আবেদনেই জমা নিচ্ছি না আমরা। আগেই এই প্রকল্পে বিনামূল্যে গ্যাস দেওয়া হত। কিন্তু কানেকশন নেওয়ার পরেও সিলিন্ডার টাকা দিয়েই কিনে নিতে হত।” গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য রাজ্যে চালু থাকলেও এই রাজ্যে উজ্জ্বলা যোজনা বন্ধ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় এই যোজনায় বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলোর মহিলাদের নামে বিনামূল্যে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই সংযোগ নিয়েও এক শ্রেণির দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। শুক্রবার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির হামলায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তার আগে বুধবার জলদাপাড়ার জঙ্গলে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে একসঙ্গে তিন মহিলার মৃত্যু হয়। জখম হয়েছিলেন দক্ষিণ মেন্দাবাড়ির আরেক মহিলা নিমা চারোয়া। তিনি বলেন, “অন্তত তিনবার আমি বিনামূল্যে গ্যাসের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু আমি গ্যাসের সংযোগ পাইনি। যাঁদের গ্যাস আছে, তাঁরাও বর্ধিত দাম দিয়ে সিলিন্ডার কিনতে পারেন না। সেই কারণে জঙ্গলের কাঠই উনুন জ্বালানোর একমাত্র ভরসা।”
এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছে তৃণমূল। আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা বিধানসভায় শাসকদলের মুখপাত্র সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, “আমরা বারবার বলছি কেন্দ্রের মোদি সরকার শুধু জনদরদি বুলি আওড়াচ্ছে। একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জনদরদি সরকার। গোটা দেশ এটা মেনে নিতে শুরু করেছে। উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস পেলে আর গ্যাসের দাম একটু কম হলে এভাবেবসতিবাসীদের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে জঙ্গলে যেতে হত না। এভাবে হাতির হামলায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটত না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.