ধীমান রায়, ভাতার: ব্যালট বাক্স ঘিরে ধরে তাড়াহুড়ো করে পরপর ব্যালট পেপার ঢুকিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আরও কয়েকজন। কেউ নজর রাখছেন ঠিকঠাক কাজ হচ্ছে কিনা। কেউ বাইরে নজর রাখছেন। ভোট পর্ব মিটে যাওয়ার পর প্রায় এক মিনিটের একটি ‘ছাপ্পা ভোটের’ ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে।
ভাতারের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সোমবার সকাল নাগাদ এই ভিডিও ফরোয়ার্ড করেন ভাতার ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি তপন কুমার সামন্ত। আর ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোষ্ট হতেই মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। কংগ্রেসের দাবি, ভিডিওটি ভোটের দিন ভাতার ব্লকের বলগোনা পঞ্চায়েতের ভাটাকুল গ্রামে ৬৯ এবং ৭০ নম্বর বুথের। আর এভাবেই ছাপ্পা দিয়ে তৃণমূল ওই বুথ দু’টিতে জয়লাভ করেছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব কংগ্রেসের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের গননাপর্ব মিটে যাওয়ার পরেও রাজনৈতিক চাপানউতোর চলেই যাচ্ছে। কখনও বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার হচ্ছে ব্যালট পেপার। কখনও বুথের ভিতর ছাপ্পার ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে ভাতার এলাকায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক মিনিট দুই সেকেণ্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তারপর মোবাইলে তা ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, ভোটের দিন ভাতারের বলগোনা পঞ্চায়েতের ভাটাকুল গ্রামে ৬৯, এবং ৭০ নম্বর বুথে ব্যাপক গণ্ডগোল বাঁধে। ওদিন বেশ কিছু লোকজন বুথের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তারপর দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ কোনোরকমে পরিস্থিতি ঠেকা দেয়। দুপুরের দিকে ওই গণ্ডগোলের পর ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ভোট হয়নি। ব্যালট বাক্স দুটি প্রশাসন বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ের পর যথাস্থানে নিয়ে চলে আসে।
জানা গিয়েছে, একই ভবনে পাশাপাশি ছিল দুটি বুথ। ওই দুটি বুথেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই হয়েছিল। ভোটের ফলাফলে দেখা যায় ৬৯ নম্বর বুথে মোট ভোটার ১২১৫ জন। তার মধ্যে ভোট পড়েছিল ৩৮২ টি। বাতিল হয় ৩৫ টি ভোট। ফলাফলে দেখা যায় তৃণমূল প্রার্থী জালালউদ্দিন শেখ পেয়েছেন ২০১ টি ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী শেখ সাহজাহানের প্রাপ্ত ভোট ১৪৬টি ভোট। অপরদিকে ৭০ নম্বর বুথে মোট ভোটার ৯০০ জন। তার মধ্যে ভোট পড়েছে ৪২৫টি । বাতিল ভোট ৭টি। এর মধ্যে তৃণমূল প্রার্থী আলাউদ্দিন শেখের প্রাপ্ত ভোট ২৭৬টি । কংগ্রেস প্রার্থী শেখ তোয়েব পেয়েছেন ১৪২টি ভোট। অর্থাৎ দুটি বুথেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তার মধ্যে এদিন ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ভাতার ব্লক কংগ্রেসের আহ্বায়ক টুটু মুন্সি বলেন, “ভাটাকুল গ্রামের ওই বুথ দুটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার জন্য প্রথম থেকেই আমরা আবেদন করেছিলাম। শাসকদলের লোকজন ভোট লুট করে জিতেছে এর থেকে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে। ওই বুথ দুটিতে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আমরা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিচ্ছি। ভিডিওতে যাদের ছাপ্পা দিতে দেখা যাচ্ছে তাদের প্রত্যেককেই আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের নামের তালিকা প্রশাসনকেও জানিয়েছি।”
কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের অভিযোগ,” এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে তৃণমূল কংগ্রেস যেটা সবুজ ঝড় বলে দাবি করছে সেটা আসলে লুটের ঝড়। এভাবেই শাসকদল সারারাজ্যে জিতেছে।” ভাতারের বাসিন্দা জেলা পরিষদের প্রার্থী তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তনু কোঁয়ার বলেন, “ওভাবে কারা ভিডিও সংগ্রহ করেছে, তারাই জানে। ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা কারা এটাই আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যাদের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তারা আদপেই তৃণমূল কর্মী কিনা আমার অন্তত জানা নেই। তবে ভাতার এলাকার সর্বত্র স্বচ্ছ ভোট হয়েছে। মানুষ তাদের রায় দিয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগের ভিত্তি নেই।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.