বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ধান পাকতেই উত্তরে হাতি-মানুষের সংঘাত চরমে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত হাতির হামলায় প্রাণ হারালেন ১০ জন। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫।
ধারাবাহিক মৃত্যুর ঘটনায় শিলিগুড়ি মহকুমা ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় আতঙ্ক জাকিয়ে বসেছে। বিকেলের পর গ্রামের বাসিন্দারা বাড়ির বাইরে পা বাড়াতে সাহস পাচ্ছে না। আবার অনেকেরই বিনিদ্র রাত কাটছে ধান পাহারায়। তবু রেহাই মিলছে না। সর্বশেষ বুধবার রাতে ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের সুল্কাপাড়ায় এক ব্যক্তিকে পা দিয়ে পিষে মারে হাতি। মঙ্গলবার ওই ব্লকেই একজনকে হাতি আছড়ে মেরেছিল। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অভিযোগ, বনদপ্তরের তরফে নজরদারি বাড়ানো হলে পরিস্থিতি যে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না বেড়ে চলা ঘটনা তারই প্রমাণ। এদিকে বেগতিক অবস্থা দেখে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের তরফে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে সতর্ক করে গ্রামবাসীদের মধ্যে সার্চ লাইট, পটকা বিলি করা হয়েছে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে বড় মাপের বুনো হাতির দলের তাণ্ডব চলে কোচবিহার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। ৪ নভেম্বর সকালে ছটি হাতির দল ওই জেলার দিনহাটার মাতালহাটে ঢুকে পড়ে। এরপর সিতাই, শিতলকুচি, নিশিগঞ্জ ও মাথাভাঙার বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়। হাতি সামনে পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়। পরদিন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে জংলী হাতি আছড়ে মারে এক বনকর্মীকে। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা এলাকায় পরপর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কে সিটিয়েছেন বাসিন্দারা। একই পরিস্থিতি শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, খড়িবাড়ি, ফাসিদেওয়া ব্লকের বাগডোগরা, বুড়াগঞ্জ, হাতিঘিসা, মণিরাম, কেটুগাবুরজোত, মতিধর, গিরিশচন্দ্র, মানঝা চা বাগান এলাকায়। এখানে ১৫ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বরের মধ্যে হাতির হামলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নকশালবাড়ি থানার কেটুগাবুর জোত এলাকার বাসিন্দা বিপুল দাস জানান, প্রায় প্রতি রাতে গ্রামে হাতি ঢুকছে টুকুরিয়াঝাড় ও বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল থেকে। পটকা ফাটিয়ে, কানেস্তারা বাজিয়ে হাতি তাড়িয়ে কোনওমতে ধানরক্ষা হয়েছে। ধান কাটা অনেকটা শেষ। এবার হাতি এলাকায় এসে খেতে ধান না পেয়ে বস্তিতে হামলা চালাতে পারে।
বনকর্মীরা অবশ্য জানিয়েছেন, প্রতি বছর ধান পাকার মরশুমে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতির আনাগোনা বেড়ে যায়। সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। পুজোর দিনগুলোতে আলোকসজ্জা, মাইকের শব্দ থাকায় বুনোরা খুব একটা জঙ্গল থেকে বের হয়নি। কিন্তু দশমীর পর থেকে সন্ধ্যা নামতে ধানের লোভে দলবেঁধে লোকালয়ে পাড়ি জমাতে শুরু করেছে। যদিও হাতির দল আলো দেখে ভয়ে লোকালয়ে আসছে না বনকর্মীদের ওই দাবি স্থানীয় বাসিন্দারা মানতে নারাজ। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, তবে কালীপুজোর রাতে নাগরাকাটার খেরকাটা বস্তিতে বুনো হাতি দু’জনকে শুঁড়ে তুলে কেমন করে ছুড়ে দেয়! সেখানে একজনের মৃত্যুও হয়েছে। সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ। তিনি বলেন, “জঙ্গল লাগোয়া প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে সতর্ক করা হয়েছে। হাতি তাড়াতে অন্তত দুশো গ্রামবাসীকে সার্চ লাইট, পটকা দেওয়া হয়েছে।”
মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের তাপস সরকার জানান, প্রতি বছর নভেম্বরের পর থেকে এলাকায় হাতির উপদ্রব বেড়ে যায়। খেতে খাবার না পেয়ে ঘরদোর ভাঙচুর করে। জলপাইগুড়ির বনাধিকারিক জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “এই মূহুর্তে বৈকুন্ঠপুর, গরুমারা জঙ্গলে প্রচুর হাতি রয়েছে। ওই হাতিদের গতিবিধির উপরে নজর রাখা হয়েছে। বন সুরক্ষা কমিটিগুলোকে পর্যাপ্ত পটকা এবং সার্চ লাইট দেওয়া আছে। এছাড়াও বনকর্মীরা টহল দিচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.