স্টাফ রিপোর্টার, হাওড়া: প্রান্তিক পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বিশ্বে সেরা ১০টি স্কুলের মধ্যে জায়গা করে নিল হাওড়ার (Howrah) টিকিয়াপাড়ার সামারিটন মিশন স্কুল। শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা ব্রিটেনের একটি সংস্থা ও কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সমীক্ষা চালিয়ে হাওড়ার এই স্কুলটিকে বিশ্বের সেরা ১০০টি স্কুলের মধ্যে থেকে বেছে প্রথম সেরা দশের মধ্যে রাখা হয়েছে।
সেরা দশে জায়গা করে নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের পোষিত হাওড়ার এই স্কুলের কর্তৃপক্ষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে এই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, সেরা দশে হাওড়ার এই স্কুলটি জায়গা করে নেওয়ায় তিনি খুশি।
হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার ২৩৪ নম্বর বেলিলিয়াস রোডে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চলে স্কুলটি। ২০০১ সালে তৈরি হয় স্কুলটি। তখন ছ’জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে স্কুলটি তৈরি হয়েছিল। এখন ছ’তলা বিল্ডিংয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এই স্কুলে মূলত হতদরিদ্র ও আর্থিক বা সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েরাই পড়ে। স্কুলের প্রতিষ্ঠতা মামুন আখতার টিকিয়াপাড়ার একটি বস্তিতে থাকতেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন কেন বস্তির ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হতে পারে না। তাঁদের সেই সমস্যাগুলিকে বের করে তার সমাধানের চেষ্টা করতেই স্কুলটি তৈরি করেন। বস্তির ছেলেমেয়েদের শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যেতে মূলত তাদের জন্যই এই স্কুলটি করেন মামুন আখতার। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীকেই এই স্কুলে নিখরচায় পড়ানো হয়। কারও কাছ থেকে ফি নেওয়া হলেও মাসে ১০০ কিংবা ১৫০ টাকা নিয়ে পড়ানো হয়। প্রায় ১৩১ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী কাজ করেন।
Happy to know and share that Samaritan Mission School of Howrah is amongst ten top inspirational schools all over the world. (1/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) June 10, 2022
শুক্রবার এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মামন আখতার জানালেন, একটি ছাত্র বা ছাত্রীকে স্কুলে ভরতি নেওয়ার আগে তার ও তার পরিবারের আর্থিক বা সামাজিকভাবে কী সমস্যা রয়েছে আগে তা দেখা হয়। পড়ুয়াটি কতটা দরিদ্র বা পিছিয়ে পড়া তা জানার চেষ্টা করা হয়। তার পর তাকে স্কুলে ভরতি নেওয়া হয়। নজর দেওয়া হয় তাদের স্বাস্থ্যের দিকেও। শুধু স্কুলের পড়াশোনায় নম্বর পাওয়া নয়, একজন ছাত্র বা ছাত্রীর সামাজিক সর্বাঙ্গীণ শিক্ষাই তাঁদের লক্ষ্য। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশাত্মবোধ তৈরির শিক্ষাও এই স্কুলে দেওয়া হয়। এই স্কুলে পড়ুয়াদের প্রথম ভাষা ইংরেজি ও দ্বিতীয় ভাষা বাংলা। রাজ্য সরকারের অনুমোদিত এই স্কুলটি থেকে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দেয়। ভাল ফলাফলও করে। মাস দেড়েক আগেই ইউকে-র ওই সংস্থাটি স্কুলটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেয়। ভিডিও কনফারেন্সে স্কুলে কীভাবে পঠনপাঠন হয় তা দেখে ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলে। অবশেষে সব দিক বিচার করে স্কুলটি জায়গা করে নিল বিশ্বের সেরা দশে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.