সম্যক খান ও সুনীপা চক্রবর্তী: দেড়মাস পর পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে মিলল বাঘের মৃতদেহ। শুক্রবার সকালে সদর ব্লকের বাগঘরার জঙ্গলে বাঘের মৃতদেহ পড়ে থাকে দেখেন গ্রামবাসীরা। বছরের এই সময়ে শিকার উৎসব পালন করতে জঙ্গলে যান আদিবাসীরা। শুক্রবার সকালে বাগঘরার জঙ্গলে বাঘের হামলায় আহত হন দুই আদিবাসী যুবক। বন দপ্তরের অনুমান, আত্মরক্ষা করতে গিয়ে সম্ভবত বাঘটিকে মেরে ফেলেছেন আদিবাসীরা। গভীর জঙ্গলে বাঘের মৃত্যুর ঘটনা বন দপ্তরের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন পশুপ্রেমীরা।
সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গলের খ্যাতি জগৎজোড়া। কিন্তু, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জঙ্গলে কস্মিনকালেও বাঘের দেখা মেলেনি। তাই মাস খানেক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়ের জঙ্গলে লাগানো ক্যামেরায় যখন বাঘের ছবি ধরা পড়েছিল, তখন চমকে গিয়েছিলেন বনকর্তারা। বাঘ ধরার জন্য চেষ্টার কোনও কসুর করেননি বনকর্মীরা। একবার তো মেদিনীপুরের সদর ব্লকের বাগঘরার জঙ্গলে বাঘটিকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলেন আদিবাসীরা। কিন্তু, বনকর্মীর পৌঁছনোর আগেই জাল ছিঁড়ে পালিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণরায়। সেবার বাঘের হামলার আহত হয়েছিলেন ২ জন। সেই ঘটনার পর প্রায় দেড়মাস কেটে গিয়েছে। শুক্রবার সকালে বাগঘরার জঙ্গলেই মিলল বাঘের মৃতদেহ। বন দপ্তর সূত্রের খবর, সকালে জঙ্গলে বাঘের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরাই। তাঁরাই বন দপ্তরে খবর দেন। বনকর্তাদের অনুমান, মৃত্যু নয় বরং আত্মরক্ষা করার জন্য বাঘ মেরে ফেলেছেন আদিবাসীরা।
আদিবাসী সমাজে শিকার উৎসবে পালনের রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। বছরের এই সময়টায়ই শিকার করতে দল বেঁধে জঙ্গলে যান আদিবাসীরা। বস্তুত, মাস দেড়েক আগে শিকার উৎসব পালন করতে গিয়েই মেদিনীপুর সদর ব্লকের বাগঘরার জঙ্গলে বাঘের হামলার মুখে পড়েছিলেন ২ জন যুবক। হামলার পর একটি গর্তে পড়ে গিয়েছিল দক্ষিণরায়। তাকে ঘিরে ফেলেছিলেন অন্য আদিবাসীরা। কিন্তু, বনকর্মীর অকুস্থলে পৌঁছনোর আগে বাঘটি জাল ছিঁড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বন দপ্তরের কর্মীরা বলছেন, গত দেড়মাস ধরে বাগঘরার জঙ্গলেই ঘোরাফেরা করছিল বাঘটি। জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে বারবারই বাঘের হামলার মুখে পড়ছিলেন আদিবাসীরা। শুক্রবারও বাগঘরার জঙ্গলে বাঘের রক্তাক্ত হন দুই আদিবাসী যুবক। তাঁরা বলছেন, বারবার এভাবে হামলার মুখে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলেন আদিবাসী শিকারি। সম্ভবত আত্মরক্ষার জন্য বাঘটিকে মেরে ফেলেছিলেন তাঁরা।
তবে কারণ যাই হোক না কেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে বাঘের মৃত্যুর জন্য বন দপ্তরের ব্যর্থতাকেই দায়ি করেছেন পশুপ্রেমীরা। তাঁদের বক্তব্য বনকর্মীরা যখন নিশ্চিতই ছিলেন, বাঘটি বাগঘরার জঙ্গলেই আছে। তাহলে ওই জঙ্গলের নিরাপত্তার আরও বাড়ানো হল না কেন? আদিবাসীদের শিকার উৎসবেই বা কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করল বন দপ্তর? বন দপ্তরের কর্তারা অবশ্য দাবি, বাঘ ধরা না পড়া পর্যন্ত শিকার না যাওয়ার জন্য বারবার আদিবাসীদের অনুরোধ করেছিলেন তাঁরা। তাতে কোনও কাজ হয়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.