সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: কথায় বলে ‘রাখে হরি তো মারে কে?’ সেই কথারই পুনরাবৃত্তি ঘটল রূপনারায়ণের নৌকাডুবির ঘটনায়। সোমবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার মায়াচর থেকে অমৃতবেড়িয়া যাওয়ার পথে রূপনারায়ণ নদের প্রবল স্রোতে একটি যাত্রীবোঝাই নৌকো ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীরা সকলে যখন জলের তোড়ে ভেসে যেতে থাকেন তখন উপস্থিত বুদ্ধির জোরে রক্ষা পেলেন তিন মহিলা এবং তিন শিশু।
নৌকাডুবির সময় ওই তিন মহিলা এতটুকুও বিচলিত হননি। পরিবর্তে নৌকোয় থাকা তেলের ড্রামগুলি ফাঁকা করতে থাকেন তিনি। তখন সেই ড্রামগুলিই যেন তাঁদের কাছে আস্ত লাইফবোট। নৌকোয় থাকা এরকম প্রায় ১০টি প্লাস্টিক ড্রাম তাঁরা খালি করে মুহূর্তের মধ্যে নদীর জলে ভাসিয়ে দেন। দুটি ড্রাম দু’জন মহিলা ও তাঁদের দুই শিশুর জীবন রক্ষা করেন। পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয়ী ভগবতী মাইতি বলেন,”এক বছর দু’মাস বয়সি শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। নৌকোয় তখন ৪০-৪৫ জন যাত্রী। নৌকোটি মাঝনদীতে আসতেই হঠাৎই বান আসে। নৌকো ডুবতে থাকে। তখন এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করিনি। একটি তেলের ড্রাম খালি করে ডান হাতে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বাম হাতে ফাঁকা ড্রাম নিয়ে জলে ভাসতে শুরু করি। এক সময় ভেবেছিলাম আর বুঝি বাঁচা সম্ভব হবে না। কিন্তু মানসিক জোর আর তেলের খালি জারকে সম্বল করে জলের স্রোতে ভাসতে ভাসতে শ্যামপুর এলাকার ডাঙায় চলে আসি। তারপরই স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করেন।”
একইভাবে শ্যামপুরের দেউলির বাসিন্দা পুতুল জানা তাঁর তিন বছরের শিশুকন্যা কোয়েলকে তেলের ড্রামের মাধ্যমে বাঁচিয়ে ফেরান। তাঁদেরকেও স্থানীয়রা উদ্ধার করে কমলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। শিবানী মাজি নামে আরেকজন মহিলা তাঁর আট বছরের ছেলেকে নিয়ে জলে ঝাঁপ দেন। কিন্তু জলের তোড়ে তাঁরা দু’জনেই ভেসে যেতে থাকেন। নৌকার মাঝিরা তাঁদের উদ্ধার করেন। এভাবেই রক্ষা পান তিন মা ও তাঁদের সন্তান।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সকলেই সুস্থ রয়েছেন। এদিনের নৌকাডুবির ঘটনায় ১৫জন যাত্রী নদীতে সাঁতরে শ্যামপুরের বিভিন্ন এলাকায় ওঠেন। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। ডুবে যাওয়া নৌকোটিও ভাঙা অবস্থায় ঝুমঝুমি ও অনন্তপুরের মাঝখান থেকে উদ্ধার করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.