চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: পরিত্যক্ত খনিতে নেমে আটকে পড়লেন তিন যুবক। রবিবার গভীর রাতে কয়লা চুরির উদ্দেশে সেখানে নামার পর বিষাক্ত গ্যাসের কবলে পড়েন তাঁরা। আসানসোলের কুলটির আলডিহি পুরনো বিজলি ঘরের কাছে এই ঘটনার থবর পেয়ে রাতেই সেখানে পৌঁছান স্থানীয় কাউন্সিলর নেপাল চৌধুরি। রাতে মাইন রেসকিউ টিমের সদস্যরা সেখানে গেলেও, একাধিক প্রতিকূলতার কারণে উদ্ধারে ব্যর্থ হন। সকাল পর্যন্তও ওই তিন ব্যক্তির কোনও খোঁজ মেলেনি।
আলডিহির এই এলাকায় বেশ কয়েকটি বেআইনি কয়লা খাদান চলত কয়েক বছর আগে পর্যন্তও। ব্যবস্থা নিয়ে সেসব বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি ফের পরিত্যক্ত খনিগুলিতে চোরাই ব্যবসা শুরু হয়েছে বলে খবর। সূত্রের খবর, চন্দ্রমা নামে এক স্থানীয় যুবক এই এলাকায় কয়লা সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। সেখানেই রয়েছে কয়লার অবৈধ কাঁটা। খনি থেকে কয়লা তুলে তা কাঁটায় পাচার করার উদ্দেশেই ওই তিন যুবক
সেখানে নেমেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলর নেপাল চৌধুরি ঘটনার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, সম্ভবত চারজন প্রবেশ করেছিল অবৈধ ওই খনিতে। সেখান থেকে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস নাকে লাগতেই একজন তড়িঘড়ি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাকি তিন জন আটকে পড়ে। ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকা পরিস্থিতি দেখেছে কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ।
আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে বেশ কয়েকটি প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে মাইন রেসকিউ টিম। এই দলের আধিকারিক সত্যব্রত সরকার জানিয়েছেন, খনির ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত কম এবং মিথেন গ্যাসের পরিমাণ অনেক বেশি। তারউপর খনিমুখটি একেবারেই ছোট। তা খুঁড়ে বড় করার পর অক্সিজেন চলাচল স্বাভাবিক হলে, তবেই খনিতে নেমে উদ্ধারকাজ সম্ভব।
২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আলডিহির এই এলাকায় রমরমিয়ে বেআইনি খাদান চলতো। ভূগর্ভস্থ এলাকা কয়লা কেটে নেওয়ায় পরে বিপজ্জনক রূপ নেয়। ইসিএল সোদপুর এরিয়ার ওই এলাকায় প্রায় ধস নামতে শুরু করে। সেই এলাকাতে ইসিএলের ওয়াগেন লাইন ছিল। ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাইয়ের কন্ট্রোল রুম ছিল। সেগুলিও সেই সময় ধসের কবলে পড়ে। পরে ওয়াগেন লাইন উঠিয়ে দেওয়া হয়। ইলেকট্রিক কন্ট্রোল রুম অর্থাৎ বিজলি ঘরটিও সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার নতুন করে ওই সব পরিত্যক্ত খাদানগুলিতে চোরাই কয়লা কাটা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ঘটনাস্থলের সামনেই রয়েছে লছিপুর গেট। এখানে ফের অবৈধ খনন শুরু হয়েছে এবং সামান্য টাকার প্রলোভনে পড়ে মৃত্যুর উপত্যকায় নেমে পড়ছে স্থানীয় যুবকরা। তারপরেই ঘটছে দুর্ঘটনা। পুরো ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে কুলটি থানা ও নিয়ামতপুর ফাঁড়ির ভূমিকা নিয়েও।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.