তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বসিরহাট: মহাবীরের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তিন-চার গ্রামের মানুষ। তার স্মৃতিতেই এবার তৈরি হবে মন্দির। না মহাবীর কোনও মানুষ নয় ! কিন্তু মানুষ না হয়েও যেভাবে তার জন্য কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন শেষকৃত্যে তা সত্যিই ভোলার নয়। আর এই ভিড়ে ছিল না কোনও জাতিভেদ। কারণ মহাবীর ছিল সবার কাছেই বড় প্রিয়। প্রত্যেকের দালান থেকে ঘরের চালে দিন গুজরান ছিল বয়স্ক হনুমান মহাবীরের। কিন্তু কোনও দিন সে কারও ক্ষতি করেনি। তিন-চার গ্রামের ভালবাসাতেই এতদিন ধরে তাঁদের নিকটজন হয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে নতুন বছরের প্রথম দিনই বাদুড়িয়ার পুঁড়া,খোড়গাছির গ্রামের মানুষদের ছেড়ে চলে গিয়েছে সে।
[শীতে বেড়েই চলেছে সবজির দাম, বিপাকে মধ্যবিত্ত]
গৃহস্থদের বাড়ির ছাদে, বারান্দা, বাগান সর্বত্র ঘুরে বেড়াত অবাধে মহাবীর। গ্রামবাসীরাও যত্ন করে ফলমূল খেত দিত তাকে। চার-পাঁচ গ্রামে অবাধ বিচরণ ও শান্ত স্বভাবের জন্য প্রায় সকলেরই প্রিয় হয়ে গিয়েছিল হনুমানটি। বার্ধক্যজনিত কারণে ও বছরের শুরুতে প্রবল শীতের দাপটে মারা গিয়েছে সে. মহাবীরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাদুড়িয়ার খোড়গাছি গ্রামে। রীতিমতো শোকমিছিল করে গ্রামের নদীর ধারের একফালি জায়গাতে তাকে সমাধিস্থ করেন এলাকার মানুষজন। স্থানীয়রা স্থির করেন, যেহেতু গ্রামের সকলেরই আপন হয়ে গিয়েছিল সে, তাই শাস্ত্রমতে তার পারলৌকিক কাজ করা হবে। সমাধির উপরেই তৈরি করা হবে মন্দির। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। রীতিমতো কমিটি গড়ে চাঁদার টাকায় শ্রাদ্ধ-শান্তি, খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন গ্রামবাসীরাই। রবিবার আশপাশের চার-পাঁচটি গ্রামের মানুষ নিমন্ত্রিত ছিলেন মহাবীরের শ্রাদ্ধে। ছিল কীর্তন গানেরও আয়োজন। মহাবীরের আত্মার শান্তি কামনায় খোড়গাছি গ্রামে হয় প্রার্থনা সভা। প্রার্থনা সভা শেষে প্রায় এক হাজার মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। মেনুতে ছিল খিচুড়ি, আলুরদম, বাঁধাকপির তরকারি। শেষ পাতে ছিল চাটনি্ ও বোঁদে। আর ছিল পবনপুত্রের প্রিয় ফল কলা।
[আদিবাসীদের রেল ও সড়ক অবরোধ, সপ্তাহের প্রথম দিনে দুর্ভোগ]
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর ধরে এলাকায় গাছে গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছিল হনুমানটি। কারও কোনও ক্ষতি করত না। ১ জানুয়ারি হঠাৎই উপর থেকে পড়ে যায় সে। ওর অসুস্থতা বুঝতে পারে সকলেই। কিন্তু সেবাযত্ন করেও ওকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি। চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার বিবরণ দিতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন ওই এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ মিতা কর্মকার। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এত দ্রুত বিষয়টি ঘটে যায় যে বন দপ্তরকে খবর দেওয়ারে সময়টুকু পেলাম না।’’ ইছামতীর তীরে গর্ত খুঁড়ে যেখানে পবনপুত্রকে সমাধিস্থ করা হয়েছে, সেখানে ওই সমাধির উপরেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হবে। গ্রামবাসীদের চাঁদার টাকায় ওই মন্দিরের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।
[শীতের পৌষ মাস, ১০.৫ ডিগ্রিতে কলকাতায় আরও এক শীতলতম দিন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.