সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলে দান করতে নিজের লক্ষ্মীর ভাঁড়ই তুলে দিল এক খুদে পড়ুয়া। শহর পুরুলিয়ার কর্পূর বাগানের বাসিন্দা কেজি-টু’র ছাত্র অর্পণ গুপ্ত তার বাবার সঙ্গে জেলা প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে ওই ভাঁড় তুলে দেয় জেলাশাসকের হাতে। সেই ভাঁড় থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকরা জমানো ১,৫০০ টাকা ত্রাণ তহবিলের জন্য নিয়ে নেন। তারপর জেলাশাসক সেই শূন্য ভাঁড় ওই খুদে পড়ুয়ার হাতে তুলে দিয়ে বলেন, “এটা বাড়ি নিয়ে যাও আবার কাজে লাগবে।” এই খুদে পড়ুয়ার এই কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
একা অর্পণ নয়। তারই মতো করোনা যুদ্ধে আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে আরও দুই পড়ুয়া। পুজোর জামাকাপড় কিনবে বলে টাকা জমিয়েছিল সূর্য সেন পল্লির দুই ভাই – মন্থন পাত্র ও ময়ূখ পাত্র। সেই সঞ্চয় থেকে ৩৫,৩০০ টাকা ত্রাণ তহবিলের জন্য একইভাবে জেলাশাসকের হাতে তুলে দেয়। মন্থন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। তার জমানো ছিল ২৫,২০০ টাকা। ময়ূখ পড়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে। সে তুলে দেয় ১০,১০০ টাকা। ছোটদের কাছ থেকে এত বড় সহযোগিতা পেয়ে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “এটা আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা।”
শহর পুরুলিয়ার নবোদয় বিদ্যালয়ের বাসিন্দা ছোট্ট অর্পণ রাস মেলা থেকে টাকা জমানোর জন্য লক্ষ্মীর ভাঁড় কেনে। সেখানেই এক টাকা, দু’টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা করে জমাত সে। সবমিলিয়ে মোট দেড় হাজার টাকা সঞ্চয় করে অর্পণ। তার কথায়, “আমি যে টাকা জমিয়েছিলাম, তা যাতে এই অবস্থা দরিদ্র মানুষজনের ভালর জন্য কাজে লাগে, তাই ওই ভাঁড় তুলে দিয়েছি।” একইভাবে মন্থন ও ময়ূখ – দুই ভাইও পুজোর সময় জামাকাপড়ের জন্য বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ তাদের মায়ের কাছে জমিয়ে রাখে। পুরুলিয়া জেলা স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ময়ূখ পাত্র বলে, “পুজোর সময় বাবা–মা জামাকাপড় দেয়। আত্মীয়রা জামাকাপড় কেনার জন্য যে অর্থ টাকা দেয়, তা মায়ের কাছে আমরা দুই ভাই জমিয়ে রাখি। সেই অর্থই তুলে দিয়েছি।” এর আগেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অনেক খুদেই নানাভাবে তাদের নিজেদের সীমিত সাধ্যমতো ত্রাণ সাহায্য করেছে মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে। সেই তালিকাই আরও দীর্ঘ করল পুরুলিয়ার এই তিনজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.