সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ‘জয় জয় দেবী চরাচর সারে কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে। বিনা পুস্তক রঞ্জিত হস্তে ভগবতী ভারতী দেবী নমস্তে।’ বাগদেবীর আরাধনায় এবার এই মন্ত্রচ্চারণ করবে স্কুলেরই ছাত্রীরা। জ্ঞানের দেবীর পুরোহিত এবার তিন ছাত্রী। দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বিদিশা সাহা প্রধান পুরোহিত। তাকে সাহায্য করবে তারই দুই সহপাঠী প্রিয়াঙ্কা গোপ ও বর্ষা দাস।
এবার সরস্বতী পুজোয় অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ভাদুবালা বিদ্যাপীঠ। গোটা পুজোটাই ছাত্রীদের ব্যবস্থাপনাতে হচ্ছে। রাত জেগে সামিয়ানা খাটানো, আলপনা আঁকা কিংবা রঙিন কাগজের শিকল তৈরি সবেতেই ছাত্রীরা। পুজোর দিন সকালে ফল কাটা থেকে প্রসাদ বিতরণ সব কিছুই তারা করবে। ব্রাক্ষণ পুরুষই যে একমাত্র পুরোহিত হতে পারে, এই ধারনার বদল ঘটাতে এবার কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছে স্কুলের ছাত্রীরা। অবশ্য এই কাজ করার আগে বেশ কয়েকদিন ধরেই স্থানীয় এক মন্দিরের পুরোহিতের কাছে তারা পুজোর পাঠ নিয়েছে। শিখেছে পুজোর আদব কায়দা। জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের তিন ছাত্রীই এবার পুজোর চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। ঘরে নিয়ম করে ঠাকুরকে জল-বাতাসা দিলেও বৃহৎভাবে পুরোহিতের ভূমিকায় এই প্রথম। তাই কিছুটা দ্বিধা থাকলেও আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে।
বিদিশা জানিয়েছে, “প্রতিবছর পুরোহিতই পুজো করে। ব্রাক্ষণ ও পুরুষরাই শুধু পুজো করতে পারবে এমন কোথাও বলা নেই। তাই এবার আমরাই পুজো করব বলে সিদ্ধান্ত নিই। সরস্বতী পুজোর বই নিয়ে রীতিমতো অনুশীলন করেছি।” একই মত তার দুই সহযোগী প্রিয়াঙ্কা ও বর্ষার। পরিবারের সদস্যরাও এই ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের তিন ছাত্রী-পুরোহিত। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নুল হক ছাত্রীদের এই সাহসী সিদ্ধান্তে খুশি। তিনি জানান, “আজ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। তারাও যে পুরুষদের থেকে কোন অংশে কম নয়, তার প্রমাণ প্রতি মুহূর্তে পেয়েছি আমরা। আমাকে স্কুলের ছাত্রীরাই পুজো করবে বলে প্রস্তাব করে। আমি খুশি যে তারা এগিয়ে এসেছে।” এই তিন ছাত্রীকে মন্ত্রচ্চারণ ও পাঠে সহযোগিতা করছেন স্কুলেরই সংষ্কৃত শিক্ষিকা টুম্পা চট্টোপাধ্যায়।
ছবি- উদয়ণ গুহরায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.