অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: ভাঙড় ও কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সের তিনটি থানা ভেঙে নতুন ন’টি থানা তৈরি করছে লালবাজার। এই ন’টি থানা নিয়ে যে নতুন ডিভিশন চালু হচ্ছে, তার ম্যাপও কলকাতা পুলিশ প্রকাশ করেছে। নতুন ডিভিশনটির প্রস্তাবিত নাম ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন ডিভিশন।
কিছুদিন আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় এলাকা কলকাতা পুলিশের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, নতুন ওই অঞ্চলে দু’টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রথমত, আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে থাকে। দ্বিতীয়ত, কোনও বেআইনি অস্ত্র ও বোমা মজুত করে রাখা বরদাস্ত করা হবে না। এর আগে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা কলকাতা পুলিশের আওতায় আসে। ওই থানার আওতায় ছিল ২৩টি মৌজা। এ ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুর থানা এলাকার ৪৫টি ও ভাঙড় থানা এলাকার ৭৬টি মৌজা রয়েছে। এবার কলকাতা পুলিশের আওতায় এল ওই ১৪৪টি মৌজা। ওই মৌজাগুলিকে ভেঙেই তৈরি হচ্ছে ন’টি থানা। লালবাজার জানিয়েছে, ওই ন’টি থানা হচ্ছে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স, হাতিশালা, পোলেরহাট, উত্তর কাশীপুর, বিজয়গঞ্জ বাজার, নারায়ণপুর, ভাঙড়, বোদরা ও চন্দনেশ্বর। এর মধ্যে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার আওতায় থাকছে ১৩টি মৌজা, হাতিশালা থানার আওতায় ১৯টি, পোলেরহাট থানার আওতায় ১০টি, উত্তর কাশীপুর থানার আওতায় ১৫টি, বিজয়গঞ্জ বাজার থানার আওতায় ১১টি, নারায়ণপুর থানার আওতায় ১৭টি, ভাঙড় থানার আওতায় ১৯টি, বোদরা থানার আওতায় ২০টি ও চন্দনেশ্বর থানার আওতায় ২০টি মৌজা।
ভূমি দপ্তরের পক্ষ থেকে এই মৌজা ও থানা এলাকার সীমান্তবর্তী এলাকার বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই নতুন ওই ডিভিশনের প্রত্যেকটি প্রস্তাবিত থানা এলাকা পরিদর্শন করেছেন পুলিশকর্তারা। ওই এলাকাগুলিতে বসবাস করেন, এমন মানুষের সংখ্যা, তার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকেও ওই নতুন ডিভিশনে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্তত দু’টি নতুন ট্রাফিক গার্ড তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার জন্য ট্রাফিক পুলিশের কর্তারাও এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উল্লেখ্য, আগেই কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সে বাসন্তী হাইওয়ে বরাবর একটি নতুন ট্রাফিক গার্ড তৈরির পরিকল্পনা ছিল লালবাজারের। এ ছাড়াও পঞ্চায়েত ভোটে কোন কোন এলাকায় গোলমাল হয়, তার তালিকাও তৈরি করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। যে এলাকায় গোলমাল বেশি ও যে থানার এলাকাগুলি কিছুটা বড়, তাতে বেশি সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
প্রত্যেকটি থানায় ওসি, অতিরিক্ত ওসি, গড়ে দশজন করে সাব ইন্সপেক্টর, পর্যাপ্ত সংখ্যক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ডিভিশনে দু’জন ডিসি পদমর্যাদার পুলিশকর্তার অধীনে থাকতে পারেন চার বা পাঁচজন অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার। থানা পিছু অন্তত পাঁচটি করে গাড়ি ও পর্যাপ্ত সংখ্যক বাইক থাকছে। এ ছাড়াও এলাকায় বৈদু্যতিক সাইকেল নিয়েও যাতে পুলিশকর্মীরা টহল দেন, সেই ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনটি থানার ভবন রয়েছে। বাকি থানার বাড়িগুলির জন্য জায়গা দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও ডিভিশনের সদর অফিসের জন্য পুরো একটি বাড়ি নেওয়ার পরিকল্পনাও করেছে লালবাজার। সেই জায়গাটিও দেখার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতায় একটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পক্ষে রাজ্য পুলিশকে জেলাগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে বোমা ও অস্ত্র উদ্ধারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ভাঙড় ও কাশীপুর এলাকায় গোলমাল এবং ওই এলাকা থেকেই বোমা উদ্ধার হয়েছে, তাই প্রথম থেকেই ওই এলাকাগুলিতে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.