অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: মৃত্যুর তিন মাস পর আদালতের নির্দিশে কবর থেকে তোলা হল এক ব্যক্তির দেহ। মৃতের স্ত্রী টুনটনা খাতুন বিবির করা মামলার জেরে বহরমপুর আদালতের এই নির্দেশ।
মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ডোমকলের শীতলনগরের ঘটনা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম রফিকুল হাসান মিঞা (৫৬)। গত বছর ২৮ নভেম্বর তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেই সময় আত্মীয় পরিজনেরা কোনও অভিযোগ না তুলে মৃতদেহ কবর দেন। কিন্তু কিছুদিন পরে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ, ঘটনার দিন সকালে স্বামীর অসুস্থার কথা জানিয়ে পরিজনেরা চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যায়। তবে তিনি ও তাঁর ছেলে দুটো হাসপাতাল ঘুরেও স্বামীর দেখা না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। ফিরে দেখেন মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তাঁর স্বামী।
টুনটুনা খাতুনের আরও অভিযোগ, রফিকুলের মৃত্যুর পর তিনি এবং তাঁর ছেলে জানতে পারেন, পরিজনেরা অসুস্থ অবস্থায় রফিকুলকে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে বাড়ির আট শতক জমি লিখিয়ে নিয়েছেন।
টুনটুনা খাতুন বিবি বলেন, “ঘটনার দিন সকালে আমার দেওর আজিজুল মিঞা, ননদ সুর্মিলা বিবি ও জা আম্বিয়া বিবি-সহ আরও দুজন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে অচেতন করে। তার পর হাসপাতালে নিয়ে যায়। টাকা জোগাড় করে আমি ও আমার ছেলে ডোমকল হাসপাতালে যাই। তবে সেখানে তাঁরা ছিলেন না। মুর্শিদাবাদ মোডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও যাই। সেখানেও মেলেনি স্বামীর দেখা। রাতে বাড়ি ফিরে দেখি ঘরে স্বামীর দেহ পড়ে রয়েছে। কীভাবে মারা গেল জানতে চাওয়া হলে, ওরা বলে জ্বরে মারা গিয়েছেন। তার পরে তড়িঘড়ি মৃতদেহ কবর দিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি স্বামীকে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে বাড়ির আট শতক জমি নিজেদের নামে লিখেয়ে নিয়েছিল পরিজনেরা। জমি লিখে নেওয়ার পরেই ওরা আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে।”
পরে জমি ফেরত দেওয়ার দাবি করে মৃতের ছেলে জয়লাল হাসান মিঞা ও স্ত্রী টুনটুনা খাতুন বিবি। এনিয়ে বিবাদ শুরু হলে সালিশি সভা বসিয়ে ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা হয়। একটা রফাও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযুক্ত পক্ষ না মানায় মৃতের স্ত্রী বহরমপুর আদালতে তাঁর স্বামীকে খুনের অভিযোগ তুলে মামলা করেন। সেই মামলায় আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার দুপুরে মৃত্যুর ৯৬ দিন পর কবর থেকে মৃতদেহ তোলা হল।
যদিও এক আত্মীয় আম্বিয়া বিবি বলেন, “মৃত সম্পর্কে আমার ভাশুর হতেন। সেদিন জ্বরে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানায় ওঁকে আইসিইউতে ভর্তি করা দরকার। তবে জায়গা না পেয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি মারা যান।”
কিন্তু জমি নিয়ে একটা অভিযোগ উঠছে যে?
উত্তরে আম্বিয়া বিবি জানান, “ভাশুরের ১৯ বছরের ছেলে জয়লাল হাসান মিঞা। যাকে ছেলে হিসাবে ভাশুর মান্যতা দিত না। তবুও তাকে তিন শতক জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সব জমি ফিরে পেতে চায়। না দেওয়ার ফলে ওরা মিথ্যা অভিযোগে আদালতে মামলা করে।আদালতের নির্দেশে আজ মৃতদেহ উঠল।” মৃতের ছেলে জয়লাল হাসান মিঞা বলেন,”বাবার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তির জন্যই আদালতে যাওয়া।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.