ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: পাড়ার লোকে ঠাঁই দেয়নি। সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেও জায়গা পাননি গুজরাট ফেরত তিন পরিযায়ী শ্রমিক। শেষমেশ তাদের ঠাঁই হয় পাশের গ্রামের একটি গোয়ালে। কোয়ারেন্টাইনের ১৪ দিন গোয়ালের ভিতরেই দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সোমবার বাড়ি ফেরার আশায় বুক বাঁধছেন ওই তিনজন। কিন্তু ১৪ দিনের এই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে আদৌ নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারবেন, না কি আরও দুর্দশা অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য? সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন ওই তিন অসহায় পরিযায়ীরা।
দেগঙ্গার পালপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় পাল, সুজিত দে ও গোবিন্দ দাস গুজরাটে কাপড় ফেরির কাজ করতেন। লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন তাঁরা। বহু কষ্টে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে চড়ে রাজ্যে ফেরেন তাঁরা। হাওড়ার বদলে তাঁদের নামানো হয় বর্ধমানে। সেখান থেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বারাসতে আসেন তাঁরা। ১ জুন বারাসাত থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে দেগঙ্গা থানায় পৌঁছন। ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের দাবি, তাঁরা থানায় জানিয়েছিলেন যাতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়। কারণ প্রত্যেকের বাড়িতেই স্ত্রী, সন্তান রয়েছে। থানা থেকে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নয় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে। পুলিশের কথা মতো তাঁরা পালপাড়ায় যান। কিন্তু পাড়ায় ঢুকতেই রুখে দাঁড়ায় এলাকার বাসিন্দারা।
সুজিত দে নামে এক পরিযায়ী শ্রমিকের অভিযোগ, “পাড়ার লোকেরা কোনও কথা শুনতে চাননি। সরাসরি বলে দেন পাড়ায় ঢোকা যাবে না।” কোনও উপায় না পেয়ে তিনজন ফের থানার দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেখানেও কোনও সমাধান হয়নি। ওই শ্রমিকদের অভিযোগ, থানা থেকে বলে বিডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তাঁদের কথামতো বিডিও অফিসে যান তাঁরা। কিন্তু সেখানে তাঁদের কোনও কথাই শোনা হয়নি বলে অভিযোগ। ফের তাঁরা থানায় যান। এই তিন শ্রমিকের দুর্দশা দেখে এগিয়ে আসেন থানা সংলগ্ন পাড়ার কয়েকজন যুবক। দেগঙ্গা থানার পিছনে থানা পাড়ায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ির গোয়াল ঘরে ঠাঁই দেন ওই তিনজনকে। সঞ্জয় পাল বলেন, “এই গোয়াল ঘরে কষ্ট করে কোনওমতে ১৪ দিন কাটিয়েছি। আমাদের কোয়ারেন্টাইনের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন আমরা গ্রামে ঢুকতে পারব কি না বুঝতে পারছি না। পুলিশ প্রশাসনের থেকে তো কোনও সাহায্য আশাও করছি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.