শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: বীজ রোপন করতে না করতেই অসময়ের বৃষ্টি এসে নষ্ট করে দিয়েছে সব। খেতগুলো এখন জলকাদায় ভরা ধ্বংসাবশেষ মাত্র। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ধান ও আলু চাষে। আর তার জেরে রাজ্যে গত ৭২ ঘণ্টায় তিনজন চাষির আত্মহত্যার (Suicide) খবর মিলল। পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরে তিনদিনে আত্মঘাতী হয়েছেন তিন কৃষক। জানা গিয়েছে, চন্দ্রকোনায় বাপি ঘোষ নামে বছর পঞ্চাশের আলুচাষি শুক্রবার কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। শনিবার রাতে মৃত্যু (Death) হয় তাঁর।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দ্রকোনা দু নম্বর ব্লকের লাহিড়ীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা বাপি ঘোষ। চার বিঘা জমিতে আলু (Potato) চাষ করেছিলেন। বেশিরভাগটাই ধারদেনা করে আলু বীজ কিনেছিলেন। কিন্তু টানা বৃষ্টির জেরে ওই জমিতে জল জমে যায়। ফলে জমির সমস্ত আলুই নষ্ট হতে বসে। খেতে গিয়ে জমা জল দেখেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বাপিবাবু। শুক্রবার রাতে তিনি বাড়িতে থাকা কীটনাশক বিষ পান করেন বলে দাবি পরিবারের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঘাটাল (Ghatal) মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শনিবার সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
বাপিবাবুর স্ত্রী ঝুমা ঘোষ বলেন, ”আলু চাষ করতে গিয়ে অনেক টাকা ধারদেনা হয়ে গিয়েছিল। টানা বৃষ্টির জেরে চার বিঘা জমির আলুই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তারপরই আমার স্বামী ভীষণ ভেঙে পড়েন। শুক্রবার রাতে কীটনাশক বিষ পান করেন।” চন্দ্রকোনা দু নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হীরালাল ঘোষের কথায়, ”টানা বৃষ্টির জেরে বহু চাষীর আলু নষ্ট হয়েছে। মাথায় হাত আলু চাষীদের। যাঁরা ধার দেনা করে আলু চাষ করেছেন তাদেরই সমস্যাটা বেশি। বাপি ঘোষ তাঁদের মধ্যে একজন। খুবই দুঃখজনক ঘটনা।” মৃত্যুর খবর পেয়ে বাপিবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন চন্দ্রকোনার বিধায়ক অরূপ ধাড়া। তিনি বলেন, কীভাবে পরিবারকে সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এর আগে শুক্রবার ধান (Paddy) চাষে ব্যাপক ক্ষতির জেরে আরামবাগের খানাকুলে এক চাষি আত্মঘাতী হয়েছিলেন। তরুণ পালুই নামে ওই কৃষক প্রায় আট বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। আর সেই পাকা ধান ঘরে তোলার সময়ও আসন্ন। কিন্তু নিম্নচাপের কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেই ধান নষ্ট হয়ে যায়। এত ফলন হওয়া ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হতাশায় ভেঙে পড়েন তরুণবাবু। পরিবার সূত্রে খবর, এর পর এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় বাড়ির পাশে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। যদিও অসময়ের বৃষ্টিতে চাষবাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে রয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্পের আওতায় সকলকেই ক্ষতিপূরণ বাবদ আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন কৃষিমন্ত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.