ধীমান রায়, কাটোয়া: সকাল শুরু হয় দেবীকে স্মরণ করে। তাঁকে প্রণাম করে রাতে ঘুমোতে যান সকলে। পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার ছোড়া কলোনির আরাধ্য দেবী নীলাইচণ্ডী এলাকাবাসীর রোজকার জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রায় ৮৫০ বছরের পুরনো শিলাপাথরের এই দেবীমূর্তিই রাতের অন্ধকারে চুরি হয়ে গিয়েছে। আর তা উদ্ধারের দাবিতে সকাল থেকে পথ অবরোধে নেমেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে অবরোধের পর পুলিশ কর্তাদের দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় অবরোধ ওঠে। তবে এতক্ষণ ধরে হাজার হাজার গ্রামবাসীদের অবরোধের জেরে প্রবল যানজট তৈরি হয় আউশগ্রামের তিনটি রাস্তায়।
আউশগ্রামের ছোড়া কলোনির একটি গাছতলায় রয়েছে দেবী নীলাইচণ্ডীর থান। উন্মুক্ত জায়গাতেই বছরের পর বছর ফুট দেড়েক উচ্চতার শিলামূর্তি পূজিতা হয়ে আসছেন। স্থানীয় গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। তিনিই সকলকে বিপদে-আপদে রক্ষা করে আসছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে স্থানীয়রা দেখতে পান দেবী মূর্তিটি নেই। তারপরেই ছোড়া কলোনি ও তার আশপাশের গ্রামবাসীরা চণ্ডীতলার সামনে মোড়বাঁধ ১১ মাইল রোডের ওপর জড়ো হয়ে অবরোধ শুরু করেন। পাশাপাশি মোড়বাঁধ তেরাস্তার মোড়েও বসে পড়েন ‘শয়ে ‘শয়ে গ্রামবাসী। ফলে মোড়বাঁধ ১১ মাইল রোড, ভেদিয়া মোড়বাঁধ রোড এবং ১১ মাইল মোড়বাঁধ রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
স্থানীয় ইতিহাস গবেষক রাধামাধব মণ্ডল বলেন, ”মধ্য অষ্টাদশ শতাব্দীর সময়কালের পাললিক শিলায় তৈরি নীলাইচণ্ডীর মূর্তিটি। আগে অজয় সংলগ্ন এলাকায় নীলচাষ হত। তা থেকেই দেবীর নামকরণ। দেবী যুদ্ধের বেশে সজ্জিত। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, একসময় এই চণ্ডীমাতাই নীলকরদের এলাকাছাড়া করে রক্ষা করেছিলেন গ্রামবাসীদের। সেই থেকে দেবীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এলাকাবাসীর। মূর্তিটির প্রত্নতাত্বিক মূল্য অনেক।”
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে এত প্রাচীন মূল্যবান মূর্তিটি কেন খোলা জায়গায়তেই রেখে দেওয়া হয়েছিল, পাকা মন্দির না করে? গ্রামবাসী সঞ্চিতা বিশ্বাসের কথায়, ”আমরা অনেকবার মন্দির নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেবী কাউকে না কাউকে স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে জানান তিনি উন্মুক্ত জায়গাতেই থাকবেন। তাই মন্দির করা যায়নি।” শনিবার দীর্ঘ ৭ঘণ্টা রাস্তা অবরোধের পর পূর্ব বর্ধমান জেলা ডিএসপি, ক্রাইম সমরেশ দে ঘটনাস্থলে যান। পৌঁছন আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার। তাঁরা মূর্তি খুঁজে বের করার আশ্বায় দেওয়ার পর অবরোধ ওঠে।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.