Advertisement
Advertisement
অযোধ্যা পাহাড়ে করোনা অজ্ঞতা

মারণ রোগের কথাই অজানা, ‘করোনা কি তোদের গাঁয়ের নাম বটে?’, প্রশ্ন অযোধ্যা পাহাড়বাসীর!

চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেখানে গিয়ে সচেতনতা প্রচার করলেন স্বয়ং জেলাশাসক।

This village in Ayodhya hill,Purulia thinks corona is the name of a place
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 25, 2020 6:16 pm
  • Updated:April 25, 2020 6:31 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চিনের ইউহান থেকে ইটালি ছুঁয়ে স্পেন। সেখান থেকে আমেরিকা ঘুরে মারণ ছোবল ভারতেও। লক্ষ লক্ষ মানুষকে গ্রাস করছে নোভেল করোনা ভাইরাস। ফি দিন দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যু মিছিল। কিন্তু এ দেশেরই ভূখণ্ডে থাকা পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের প্রায় হাজার খানেক ফুট উপরের জনজাতি অধ্যুষিত গ্রাম বড়গোড়া জানেই না ভাইরাসের কথা! উপসর্গ আর সচেতনতা তো দূর অস্ত। রোগের নামই যে অজানা। তার কথা শুনে তাই বড়গোড়া সরল সুরে প্রশ্ন করে, “করোনা কি তোদের গাঁয়ের নাম বটে নকি?”

PRL-DM

Advertisement

শনিবার ভরদুপুরে প্রায় দু’ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে, কুমারীঝোরা পার হয়ে এই গ্রামে পা রেখে বাসিন্দাদের এই প্রশ্নেরই মুখোমুখি হলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। বাঘমুন্ডির একেবারে জঙ্গল ছুঁয়ে থাকা এই জনপদ। আর এই বনাঞ্চল বিস্তৃত দলমা পাহাড় ছুঁয়ে ঝাড়খণ্ডের সারান্ডা পর্যন্ত। সেখান থেকে ছত্তিসগড়। এখানে থাকা প্রায় ষোল পরিবারই পাহাড়িয়া জনজাতির। যাদের রোজগার বলতে জঙ্গলের কাঠ কাটা এবং বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে পাহাড়ি পথ ধরে হাজির হয়ে তা হাটে,বাজারে বিক্রি। জেলার সেই দুর্গম গ্রাম করোনা পরিস্থিতিতে কেমন আছে, তা সরেজমিনে দেখতেই এদিন সকাল ন’টা নাগাদ পুরুলিয়া শহর থেকে রওনা দেয় এই জেলার COVID-19 টিম। নেতৃত্বে স্বয়ং জেলাশাসক। প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পথের তেইশ কিলোমিটারই পাহাড়ি পথ। সেই পথে পেরনো, তারপর দু’ কিলোমিটার হেঁটে জেলা প্রশাসনের টিম পৌঁছয় এই প্রত্যন্ত জনপদে।

[আরও পড়ুন: এলাকা পরিদর্শনে সহযোগিতা, মুখ্যসচিবকে ধন্যবাদজ্ঞাপন উত্তরবঙ্গের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের]

সেখানে পা রেখে ডিএম, এসডিও, বিডিও শুনলেন, হাওয়ায় ভেসে আসে এই রোগ। তাই মুখে কাপড় বেঁধেছেন তারা। এই ভয়ের ভাইরাস নিয়ে কথা হচ্ছিল নাগর পাহাড়িয়া, শ্রীহরি পাহাড়িয়া, সন্তুরী পাহাড়িয়ার সঙ্গে। করোনার নাম শুনেই তাঁদের প্রশ্ন, “এটা তোদের গাঁয়ের নাম? নকি দেশের নাম বটে?” করোনা ভাইরাস নিয়ে ন্যূনতম ধারণা যাঁদের নেই, সেই গ্রামে স্বভাবতই নেই কোনও মাস্ক, স্যানিটাইজার। হাত ধোবে কিসে? জলেরই যে অভাব! সেই কারণেই স্বয়ং জেলাশাসক তাঁর টিম নিয়ে এখানে এসেছেন এই মারণ রোগ নিয়ে তাঁদের সচেতন করতে। দেখলেন, খাদ্য থেকে রেশন সামগ্রী সঠিক সময়ে পৌঁছচ্ছে কিনা, কীভাবেই বা মেটানো যায় জলের অভাব।

PRL-DM1

এই জনজাতির মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে বাঘমুন্ডির বিডিওকে সেখানেই নির্দেশ দিয়ে যান, দ্রুত মেডিক্যাল ক্যাম্প করে পুষ্টিকর আহার ও শিশু খাদ্য বণ্টনের। সঙ্গে একশো দিনের কাজ। অর্থাভাব ঘোচাতে জয় বাংলা পেনশন। বিলি করা হল ত্রাণসামগ্রীও।

[আরও পড়ুন: খড়গপুর IIT’র টেক মার্কেটে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড, পুড়ে ছাই ১২টি দোকান]

জেলাশাসকের কথায়, “এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ার ভৌগোলিক দিকটা বড় চ্যালেঞ্জের। এখানে মানুষজন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন। আর বড়গোড়া তো একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। তাই এখানে এসে এই রোগ সম্বন্ধে সচেতন করা হল। দেখে নেওয়া হল খাদ্য সুরক্ষার বিষয়টিও।” আসলে, অতীতে এই এলাকা ছিল মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল। পুলিশ কর্মী ছাড়া কোনও সরকারি কর্মী বা আধিকারিকের দেখাই মেলেনি এই জনপদে। এই প্রথম কোনও জেলার প্রশাসনিক প্রধান এই গ্রামে পা রাখলেন। সশরীরে দেখে এলেন আধুনিক সভ্যতার আলো থেকে অনেকটা দূরে থাকা প্রাচীন জনজাতির জীবনযাপন।

ছবি: অমিত সিং দেও।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement