Advertisement
Advertisement

Breaking News

চৈত্র সেল

চায়ের দোকানেও চৈত্র সেল! রয়েছে স্ট্যান্ড ফ্যান জেতার সুযোগও

চা খেলেই বিনামূল্যে বিস্কুট, কোথায় এই অভিনব সেল?

This tea stall of Bengal gives exciting prizes on Chaitra Sale
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:April 11, 2019 11:27 am
  • Updated:April 11, 2019 11:27 am  

বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: চৈত্র শেষ হয়ে আসতে চলেছে বাঙালির নববর্ষ। তবে চৈত্র শেষের আগে বাঙালির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একটি বিষয়, তা হল চৈত্র সেল। চৈত্র সেলের নতুন কিছু কেনাকাটায় হয় বাঙালির নববর্ষ উদযাপন। যদিও সেই সেলের উপকরণ বলতে বোঝায়, জামা, কাপড়, শাড়ি জুতো, এরকমই বেশ কিছু জিনিস। তবে সেই সেলের উপকরণ যদি হয় চা, তাহলে কিন্তু একটু অবাক হতেই হয়। হ্যাঁ, এটাই সত্যি, সেলের উপকরণ চা। নিজের দোকানের তৈরি চায়ের উপর সেল দিচ্ছেন ব্যবসায়ী শিশির বন্দ্যোপাধ্যায়। তার চায়ের দোকান থেকে এক পেয়ালা চা খেলেই সঙ্গে মিলছে বিনামূল্যে একটি বিস্কুট এবং সঙ্গে একটি লাকি কুপন। যে কুপনে ফিরতে পারে ক্রেতার ভাগ্য। ওই কুপন থেকে ক্রেতারা পেয়ে যেতে পারেন প্রথম পুরস্কার হিসাবে স্ট্যান্ড ফ্যান, দ্বিতীয় পুরস্কার সিলিং ফ্যান, তৃতীয় পুরস্কার টেবিল ফ্যান। সেই সঙ্গে আরও তিনশজন ক্রেতা পাবেন সান্ত্বনা পুরস্কার। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ওই কুপনের ড্র হবে।

কে জানে, সকাল হলেই বাঙালির ঘরে ঘরে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেওয়া চাই-ই চাই। ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে এক হাতে খবরের কাগজ তো অন্য হাতে গরম চায়ের পেয়ালা। গরম চায়ে চুমুক না দিলে মেজাজটাই যেন খোলে না। আজকাল আবার গরম চায়ে চুমুক দিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে টাচ দেওয়াটাও অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে বাঙালির। শিশিরবাবুর দোকানে বৃহস্পতিবার চা খেতে এসে ছিলেন তরুণ সাহা, অমিত বিশ্বাস। তাঁরাই জানালেন, ‘যা-ই বলুন, শীত কিংবা বর্ষা, আড্ডা হোক বা সভা, সবেতেই গরম চা না হলে ঠিক জমে না। আর সেই গরম গরম চায়ে যদি হয় চৈত্র সেল, তাহলে তো আর কথাই নেই।’ আড্ডা প্রিয় সেইসব ক্রেতাদের হাতে গরম চায়ের পেয়ালা তুলে দিয়ে এবার চৈত্র সেল করছেন নদিয়ার নবদ্বীপের চা দোকানি শিশিরবাবু। ইদানিং আপামর বাঙালি মুখিয়ে থাকে চৈত্র সেলের দিকে। বিশেষ করে, বাড়ির মহিলাদের। চৈত্র সেল নিয়ে তাদের মধ্যে আগ্রহ সব থেকে বেশি। জামা-প্যান্ট, শাড়ি, চাদর থেকে নিত্য নতুন ডিজাইনের নানা রঙের জুতো, সেলের বাজারে আজকাল ঠাঁই করে নিয়েছে অনেক রকম উপকরণই। চৈত্র সেলের বাজারে নবতম সংযোজন মাটির ভাঁড়ে গরম চা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: আজব দুনিয়া! মানচিত্রে অস্তিত্বই নেই এই বিধানসভা কেন্দ্রের]

নবদ্বীপ প্রতাপনগর হাসপাতালের গেটে ঢুকতেই নজরে পড়বে একটি চায়ের দোকান, যার নাম ‘গরিব টি-স্টল’। ওই টি-স্টলটি চালান প্রতাপনগর বিবেকানন্দ লেনের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর শিশির বন্দোপাধ্যায়। গত বছর থেকে তিনি শুরু করেছেন চায়ের উপর চৈত্র সেল। শিশিরবাবুর দোকানের সামনে লাগানো রয়েছে চৈত্র ছেলের একটি বড় ফ্লেক্স। তাতে ছড়ার ঢঙে লেখা, ‘আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে, গরিব টি-স্টলের কথা সকলে মনে রাখে। পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি, গরিব টি-স্টলে চায়ের কথা ভুলতে নাহি পারি। চিকচিক করে বালি, কোথা নাই কাদা, গরিব টি-স্টলের কথা মনে পড়ে সদা।’ চায়ের উপর চৈত্র সেল, বিষয়টা কেমন? জানা গেল, মাত্র তিন টাকার বিনিময়ে এক কাপ চা কিনলেই সঙ্গে মিলবে ফ্রিতে একটি বিস্কুট। উপরি পাওনা হিসাবে এক কাপ চা খেলেই সঙ্গে সঙ্গে একটি লাকি কুপন পাবেন ক্রেতা। সেই কুপন ড্র হবে পয়লা বৈশাখে।

শিশির বাবু জানিয়েছেন, ‘আমি ১৯৮২ সালে হাসপাতালের গেটের এক পাশে চায়ের দোকান খুলি। এই ভেবে যে, নবদ্বীপের পার্শ্ববর্তী পূর্বস্থলী অঞ্চলের বহু গরিব ও বিপদগ্রস্ত মানুষ আসেন এই হাসপাতালে। বহু রোগীর পরিবারের লোকজনের সামর্থ্য হয় না চা বিস্কুট খাওয়ার। কারণ, এক একটি চা, বিস্কুট খেতে লেগে যায় প্রায় সাতটি টাকা। সেই সব গরিব মানুষের কথা ভেবে ন্যূনতম তিন টাকা চায়ের দাম হিসাবে ধার্য করি। সারাটা বছর ধরে তিন টাকায় শুধু চা মিললেও চৈত্রের শুরুতে চায়ের সঙ্গে দিয়ে থাকি ফ্রিতে একটি বিস্কুট। একটা চা খেলে প্রত্যেক ক্রেতাকে দেওয়া হয় একটি করে লাকি কুপন। নতুন বছরের শুরুতেই পয়লা বৈশাখের দিন কুপনের ড্র হবে। সেখানে প্রথম পুরস্কার থাকছে স্ট্যান্ড ফ্যান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার যথাক্রমে সিলিং ফ্যান ও টেবিল ফ্যান। এছাড়াও থাকছে তিনশটি সান্ত্বনা পুরস্কার।’

চৈত্রের গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই মুহূর্তে ভোটের আবহাওয়াও বেশ গরম। গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে চর্চা চলছে জোরকদমে। ভিড় বেড়েছে চায়ের দোকানগুলিতে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ী শিশিরবাবুর টি-স্টলে যে ভিড় বাড়বেই, তা তো বলাই বাহুল্য। দিনে বিক্রি এখন প্রায় ৮০০-৯০০ কাপ চা। হাতে একদম সময় নেই শিশিরবাবুর। অবশ্য তা তো হবেই, চৈত্র সেল শেষ হতে বাকি যে আর মাত্র চারদিন। ক্রেতাদের ভিড়ও তাই বেশি। তিন টাকা দিয়ে চা-বিস্কুট খেয়ে ফ্রিতে লাকি কুপন নেওয়ার সুযোগ কেউ আর হাতছাড়া করতে চাইছেন না। এই গরমে ফ্রিতে যদি বেঁধে যায় একটা ফ্যান, এমন সুযোগ ছাড়বেন কেন ক্রেতারা? চৈত্র সেল বলে কথা।

ছবি: সঞ্জিৎ ঘোষ

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement