সৌরভ মাজি, বর্ধমান: গত শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা। এলাকার শিক্ষার প্রসারে গড়ে উঠেছিল স্কুল। দেশজুড়ে তখন ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন জোরাল হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছিল বর্ধমানের প্রত্যন্ত এলাকার এই স্কুলে। ইংরেজ বিরোধিতায় এলাকার মানুষের সঙ্গে স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর গলায় তখন এক সুর। ইংরেজদের আইনে রবিবার স্কুল ছুটি থাকে। তার বিরোধিতা করে এই স্কুল রবিবার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রবিবার এই স্কুলের পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখা হয়। পরিবর্তে সোমবার ছুটি রাখা শুরু হয় স্কুলে। সেই ট্র্যাডিশন আজও চলে আসছে গোপালপুর মুক্তকেশী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
পূর্বতন বর্ধমান জেলা, অধুনা পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) জামালপুর থানা এলাকায় রয়েছে এই স্কুল। স্কুলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইংরেজ বিরোধিতার, স্বাধীনতা সংগ্রামে শরিক হওয়ার ইতিহাস। যা আজও গর্ব গ্রামের। এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯২২ সালের ৫ জানুয়ারি। স্থানীয়রাই গড়ে তুলেছিলেন এই স্কুল। চরম অর্থাভাব থাকা সত্ত্বেও কেউ ইংরেজদের সহায়তা নেননি স্কুল গড়ে তুলতে কিংবা স্কুল পরিচালনা করতে। এলাকার বাসিন্দাদের দেশভক্তি এতটাই বেশি ছিল যে ইংরেজদের কোনও সহায়তা নেওয়া যেন পাপ, এমনটাই মনে করতেন তাঁরা।
শুধু তাই নয়, ইংরেজদের আইনকানুনও মানতে চাননি তাঁরা। সেই সময় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময়ে গড়ে উঠেছিল এই স্কুল। তারপর লবণ সত্যাগ্রহ, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল দেশ। জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী উচ্চ বিদ্যালয়ও ইংরেজ বিরোধিতায় অগ্রণী ভূমিকা নেয় সেই সময়।
স্কুলের বর্তমান শিক্ষক সমীর ঘোষাল জানান, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এই স্কুলের নাম জড়িয়ে রয়েছে। সেখানে শিক্ষকতা করার সুযোগ পেয়ে তাঁরা সকলেই গর্বিত। ৯৮ বছর অতিক্রম করেও এই স্কুলে এখনও রবিবার স্কুল খোলা থাকে। রাজ্যে আর কোনও স্কুলে এমন নজির নেই। বর্তমান শিক্ষকরাও সানন্দে এখানে স্কুলে আসেন রবিবার। পড়ুয়ারাও আসে। সারা বর্ধমানের গর্ব এই স্কুল। শুধুমাত্র ইংরেজ বিরোধিতায় তাদের ঠিক করা দিনে স্কুল দেওয়া হয় না। শতবর্ষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যা আজও গর্বের স্কুল হয়ে রয়েছে জেলায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.