শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ধোপে টিকল না অসুস্থতার যুক্তি। প্রভাবশালী তত্ত্বেই বাজিমাত। অনুব্রত মণ্ডল ও সিবিআইয়ের আইনজীবীর সওয়াল জবাবের পর জামিনের আবেদন খারিজ করলেন বিচারক। প্রভাবশালী তত্ত্বে সিলমোহর দিয়ে ফের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর। আগামী ২৪ আগস্ট পর্যন্ত নিজাম প্যালেসেই থাকতে হবে তাঁকে। আদালতে সওয়াল জবাবে কী বললেন দু’পক্ষের আইনজীবী? একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
শনিবার আদালতে পৌঁছনোর আগেই অনুব্রতর (Anubrata Mandal) অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। তৃণমূল নেতার আইনজীবী আরও বলেন, মক্কেলের স্ত্রী ছবি মণ্ডলের মৃত্যুর পর লাইফ ইন্সিওরেন্স থেকে কিছু টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ওই টাকাই ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। বীরভূমের কালিকাপুরের রাইস মিলের কথাও বলা হচ্ছে। সেটি অনুব্রত মণ্ডলের শ্বশুরবাড়ির উপহার। মক্কেলের স্ত্রীকে উপহার দিয়েছিলেন তাঁর বাবা।
পালটা অনুব্রতকে আরও চারদিন হেফাজতে নেওয়ার দাবি জানায় সিবিআই। যুক্তি হিসাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, অনুব্রত মণ্ডল প্রভাবশালী। উনি জামিনে মুক্তি পেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। ভয় দেখাতে পারেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী আরও বলেন, “শুরু থেকে সিআরপিসি’র ১৬০ ধারায় নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তবে তদন্তকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করেননি উনি। অনুব্রত মণ্ডল সাধারণ অভিযুক্ত নন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে ওনার যোগাযোগ আছে। গরু পাচার মামলায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন মধ্যস্থতাকারী। দেহরক্ষীর মাধ্যমে এনামুল হকের থেকে টাকা নেন অনুব্রত। এটা একজনের ব্যবসা নয়। একটা চেন। এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। তাই তৃণমূল নেতাকে ফের সিবিআই হেফাজতে নেওয়া দরকার।”
এছাড়া বিচারকের সামনে আরও একবার অনুব্রত ও তাঁর মেয়ে সুকন্যার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী। বলেন, “ওনাকে বারবার ডাকা হলেও হাজিরা দেননি। কলকাতায় থাকলেও নিজাম প্যালেসে যাননি। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও যাননি। এমনকী চিকিৎসককে চাপ দিয়ে অসুস্থ বলে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন। অভিযুক্ত নানাভাবে তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।”
পালটা অনুব্রতর আইনজীবী জানান, “উনি ইচ্ছা করে হাজিরা দেননি এমন নয়। শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই উপস্থিত থাকতে পারেননি।” বিচারক তখন বলেন, “যখন সিবিআই তলব, তখনই অসুস্থ। এরকম কো-ইন্সিডেন্ট বারবার কি হতে পারে?” পালটা অনুব্রতর আইনজীবী জানান, “কো-ইন্সিডেন্ট নয়। ২০১১ সাল থেকে ওনার চিকিৎসা চলছে। শ্বাসকষ্ট, মধুমেহ, ফিসচুলার মতো একাধিক রোগ রয়েছে। আমাদের কাছে সব নথিপত্র আছে।” এরপর চিকিৎসা সংক্রান্ত গত ১০ বছরের নথিপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়।
বিচারক ফের প্রশ্ন করেন, “উনি (অনুব্রত মণ্ডল) কলকাতায় কতবার গিয়েছিলেন?” আইনজীবীর উত্তর, “মাত্র একবার। সেবার এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। বেড রেস্টের কথা বলা হয়েছিল। তাই চিনার পার্কের ফ্ল্যাটে ওঠেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় বাড়িতে এসে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিবিআই জেরায় রাজি ছিলেন অনুব্রত। মেডিক্যাল ডকুমেন্টসও দেওয়া হয় সিবিআইকে। উনি পালিয়ে যাননি বাড়ি থেকে।” অনুব্রতর আইনজীবী বলেন, “গরু নিলামে নাকি প্রচুর গরমিল ধরা পড়েছে। পশুর হাট থেকে কিনে নাকি সেগুলো পাচার করা হয়েছে। এনামুল ও সায়গলের নাকি কথা হয়েছে। সিবিআইয়ের দেওয়া এই তথ্য যথাযথ নয়।” পালটা সিবিআইয়ের আইনজীবী আরও একবার সায়গল হোসেনকে গরু পাচারের ক্ষেত্রে মূল মধ্যস্থতাকারী হিসাবেই দাবি করেছে।
বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “কী ধরনের নতুন তথ্য পেয়েছেন? একটা বলুন।” বিচারক প্রশ্ন করেন, “শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক আছে আপনার?” অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “শরীর আমার বরাবরই খারাপ। কালও জ্বর ছিল। কাশি আছে।” বিচারক বলেন, “চিকিৎসকরা আপনাকে দেখছেন তো? চেকআপ করছেন তো?” অনুব্রত বলেন, “এসএসকেএম হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাচ্ছি।” শারীরিক সমস্যা হলে তা অবশ্যই জানানোর কথা বলেন বিচারক। দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর কিছুক্ষণ রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারক। পরে ৪দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.