সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরনে লাল বেনারসি। মুখে সলজ্জ হাসি। বছর আটত্রিশের তিস্তাকে এদিন লাগছিল ঠিক রাজবধূর মতো। পাশে বন্ধু আর আত্মীয় পরিবেষ্টিত হয়ে বসেছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন হবু স্বামী দীপনের। ওদিকে দীপনের শিবিরেও তখন উত্তেজনা তুঙ্গে। আর কিছুক্ষণ পর চারহাত এক হবে। তাই দীপনকে বরের সাজে তৈরি করছিলেন আত্মীয়-বন্ধুরা। এদিনের গোধূলিবেলা আনন্দের পাশাপাশি ছিল টেনশনে ভরপুর। বাংলার প্রথম ‘রামধনু’ বিয়ে বলে কথা!
এই বিয়ের গল্প কিন্তু আর পাঁচটা বিয়ের মতোই। তিস্তা ও দীপন একে অপরকে ভালবেসেছিলেন। ভালবাসায় বাঁধা পড়েই ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন তাঁরা। কিন্তু দীপনের বাড়ি থেকে এই বিয়ে মানতে চায়নি। তাই তিস্তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে দেখা যায়নি বিয়ের আসরে। এও কিছু নতুন কথা নয়। অনেক সময়ই বর বা কনের বাড়ি থেকে আপত্তি ওঠে। ভালবাসার মানুষ দু’টি সেসব মেনে নিয়েই সুখের নীড় খোঁজে। তিস্তা ও দীপনও ব্যতিক্রম নন। কিন্তু এক্ষেত্রে আপত্তির কারণ অন্য। তিস্তা যে আসলে সুশান্ত। বাড়ি আগরপাড়ায়। ১৫ বছর আগে তাঁর সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি হয়। তখনই নামবদল।
এদিকে দীপন যে জন্মসূত্রে পুরুষ, তাও নয়। দীপনের আগের নাম ছিল দীপান্বিতা। শারীরিক গঠন মেয়ের হলেও লামডিঙের দীপান্বিতা আদতে ছিলেন পুরুষ। তাই সেক্স পালটাতে দ্বিধা করেননি তিনিও। ক্রমে বদলেছে তাঁর জীবন। তিনি খুঁজে পেয়েছেন যোগ্য সঙ্গিনী তিস্তাকে। ভালবাসাকে চিরকালের মতো নিজের কাছে রাখতে দু’জনেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ১৫ এপ্রিল, ট্রান্সজেন্ডার দিবসের দিন তাঁরা বিয়ের কথা ঘোষণা করেন। বাংলার প্রথম ট্রান্সডেন্ডার বিয়ে ঘোষণার জন্য এর চেয়ে ভাল দিন আর কীই বা হতে পারত? সম্প্রতি সেই বিয়ে হয়েও গিয়েছে। আগামিকাল তাঁদের রেজিস্ট্রি।
দীপনের পরিবার সম্পর্ক মানতে পারেনি বলে তিস্তার যাতে কষ্ট না হয়, তাই ফ্ল্যাটের মানুষজনই ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। বুধবারই হবে সেই অনুষ্ঠান। আর পুরোহিত বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় তো বিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বসিত। তিনি একে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন। এও জানান, এই বিয়ের জন্য অনেক কাজ বাতিল করেছেন তিনি। মেয়ে বিয়ে দিতে পেরে খুশি তিস্তার মা-ও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.