Advertisement
Advertisement

Breaking News

খনিতে নিখোঁজ

উদ্ধারকাজে বারবার পরিকল্পনা বদল, আসানসোল খনিকাণ্ডে NDRF-এই ভরসা স্থানীয়দের

১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কাউকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

Rescue process is very slow, still locals have faith in NDRF at Asansol
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:October 17, 2019 7:43 pm
  • Updated:October 18, 2019 9:56 am  

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: পরিত্যক্ত খনিতে নেমে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ৩ জনকে উদ্ধার করতে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এই প্রথম খনিতে উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসকিউ ফোর্স অর্থাৎ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে। অতীতে ধসে আটকে পড়া বা খনি সংক্রান্ত বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলেও ইসিএলের মাইনস রেসকিউ টিম ছিল শেষ অস্ত্র। সেক্ষেত্রে অপরাশেন সফল হোক বা বিফল সেখানেই দি এন্ড। অতীতে গাংটিকুলি, লালবাঁধের ধস, পরিহারপুরের ধস, কালীপাহাড়ির কোড়াপাড়ার ধসে আটকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হরিয়ানার প্রিন্সকে যে কায়দায় উদ্ধার করা হয়েছিল সেই কায়দায় উদ্ধার কাজ দেখলেন আসানসোলবাসী। যদিও উদ্ধারকার্য শুরুর পর ১২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কাউকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

উদ্ধারে নেমে বারবার বদলেছে পরিকল্পনা। কীভাবে শুরু হল উদ্ধার কাজ?

Advertisement

সকাল সাড়ে ৮ নাগাদ ডেপুটি কমান্ড্যান্ট অভয় কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে শুরু হয় কাজ। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৩২ জনের সদস্য তাঁদের অত্যধিক সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে। তাঁরা প্রথমে এলাকাটি ভালভাবে পরিদর্শন করেন। বুঝে নেন আশেপাশের মাটির চরিত্র। এরপর জেসিবি দিয়ে খনিমুখটি চওড়া করার কাজ শুরু হয়। পরিত্যক্ত অবৈধ খনির সুরঙ্গ মুখ লক্ষ্য করে দুটি জেসিবি মেশিন নামানো হয় এলাকায়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, খনির ভিতর কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইড রয়েছে উচ্চমাত্রায়। ফলে সুড়ঙ্গে ঢুকলেই মৃত্যু অনিবার্য।

[আরও পড়ুন: ডেকে নিয়ে গিয়ে নতুন জামাইকে খুন, কাঠগড়ায় শ্বশুরবাড়ি]

জেসিবি মেশিন দিয়ে প্রায় ৩০ ফুট মাটি কাটা হয় সুড়ঙ্গের উপরে। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ প্রথমে তিন সদস্য ঢুকতে প্রস্তুত হন। তার আগে একজোস্ট ফ্যানের পাইপ সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে টানা হয় বিষাক্ত গ্যাস। ২০০ পিপিএম হাইড্রোজেন সালফাইড বেরিয়ে যাওয়ার পর তিন সদস্যের দল ঢোকে সুড়ঙ্গ পথে। ফিরে আসে কিছুক্ষণের মধ্যে। ওই দলের মধ্যে পারসিং টাটারাও ও দুর্গেশ যাদব বেরিয়ে এসে কমান্ডারকে ভিতরের পরিস্থিত ব্যক্ত করেন। তাঁরা জানান, ইঁদুরের গর্তের মতো ওই সুড়ঙ্গটি প্রথমে ৬ ফুট গিয়ে বাঁ দিকে বেঁকে গিয়েছে ১২ ফুট। সেখান থেকে আরও ১০ ফুট বেঁকে গিয়েছে ডানদিকে। সামান্য ওই ২৭ ফুটেই ৩০ ফুট পর্যন্ত গভীরতা রয়েছে। এরপরেই তাঁরা বুঝিয়ে দেন উপরের মাটি কোনদিক দিয়ে কতটা কাটতে হবে। তাঁদের পরামর্শ মতো ফের শুরু হয় জেসিবি দিয়ে মাটির কাটার কাজ। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ফের সুরঙ্গ পথে যাওয়ার চেষ্টা হয়। ফের চালানো হয় একজোস্ট ফ্যান। সুড়ঙ্গ পথে ফের ঢোকে তিন সদস্যের দল। আবারও বেরিয়ে এসে তাঁরা বুঝিয়ে দেন কতটা মাটি কাটতে হবে। এরপরেই সন্ধান মেলে অবৈধ খনির চালের।

Mine

এদিন সকালে ঘটনাস্থলে আসেন কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তিনি ডেপুটি কমান্ড্যান্ট অভয় কুমার সিংকে নিজে হাতে নকশা এঁকে বুঝিয়ে দেন ধস কবলিত এলাকার চিত্র। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, আলডির এই এলাকাটিতে ব্রিটিশ কোল আমলের কয়লা খনি রয়েছে। যার কোনও নকশা ইসিএলের কাছে নেই। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত অবৈধ কয়লার কারবারিরা এই এলাকায় সুরঙ্গ পথ তৈরি করে কয়লা চুরি করত। পরে এই সুড়ঙ্গমুখগুলি ফেলে তারা পালিয়ে যায়। সেই পরিত্যক্ত জঙ্গলাকীর্ণ খাদানেই নেমেছিলেন আকনবাগানের তিন বাসিন্দা।

এদিন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কাজ দেখতে পিলপিল করে লোক জমতে থাকে এলাকায়। সাধারণ বাসিন্দাদের দাবি এই প্রথম তাঁরা এরকম বিশাল অপারেশন দেখছেন। তাঁদের আশা মৃতদেহ উদ্ধার এরাই করতে পারবে। ডেপুটি কমান্ড্যান্ট অভয় কুমার সিং বলেন, অনেকরকম বিপর্যয় মোকাবিলার ঘটনা মোকাবিলা করলেও ম্যাপ না থাকায় এই অপারেশন তাঁদের কাছে কঠিন মনে হয়েছে।

[আরও পড়ুন: অবৈধ খনিতে উদ্ধারকাজে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের, নামল এনডিআরএফ]

উল্লেখ্য, রবিবার গভীর রাতে কয়লা চুরি করতে আলডিহির বেআইনি খনিতে নেমেছিল চার যুবক। খনিমুখ থেকে সামান্য ভিতরে যেতেই বিষাক্ত মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড বেরতে থাকে। এক যুবক কোনওক্রমে পালাতে সক্ষম হলেও, বাকি তিনজন আটকে পড়েন খনির মধ্যে। সন্তোষ মারাণ্ডি, কালীচরণ কিস্কু, ও বিনয় মুর্মূু – নিখোঁজ এই তিনজনই আকনবাগান এলাকার বাসিন্দা। ইসিএলের মাইনস রেসকিউ টিম ও আসানসোল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ব্যর্থ হওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার আসে এনডিআরএফ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement