স্টাফ রিপোর্টার, বর্ধমান: মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বর্ধমানবাসী। “উফঃ। ছেঁকে ধরছে। ধূপটা জ্বালা।”, “বনবন করে ফ্যান ঘুরছে তাতেও নিস্তার নেই।” এমন টুকরো টুকরো কথোপকথন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। চায়ের দোকানের ঠেক। গৃহস্থ বাড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল। সরকারি অফিস। কোনও জায়গা বাদ নেই। সর্বত্রই হানা দিচ্ছে মশককূল।
এই মশককূলের বিনাশে কলকাতার রাজারহাট-নিউটাউনের পথেই হাঁটতে চলেছে বর্ধমানও। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা পতঙ্গবীদ গৌতম চন্দ্রর পরামর্শে মশা নিধনে গাপ্পি মাছ, কীটনাশক ও ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে রাজারহাট-নিউটাউনে। এবার তাঁরই পরামর্শে বর্ধমানেও একই পদ্ধতিতে মশা নিধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আশা, কয়েক মাসের মধ্যে মশার উপদ্রব নির্মূল করা যাবে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া-সহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধও করা যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
[ বাগডোগরায় সেনা ছাউনিতে ঢুকে পড়ল চিতাবাঘ, ছাগলের টোপে খাঁচাবন্দি ]
গত বছর দুর্গাপুজোর আগে থেকেই সারা রাজ্যের মতো পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও ডেঙ্গু-সহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। বাদ ছিল না শহর বর্ধমানও। জেলাতেই কয়েকশো মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়। তারপর রাজ্য সরকার মশা নিধন ও মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে বছরভর কর্মসূচি নিতে বলেছিল জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকে। জেলা প্রশাসন মশা নিয়ন্ত্রণ ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গড়েছে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটরিং কমিটি। এই কমিটি বৈঠক করে বিভিন্ন পদক্ষেপও নিতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য দপ্তর ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মশার উপদ্রব কমাতে হলে মশার বংশবিস্তার আটকানো প্রয়োজন। মশা মেরে উপদ্রব কমানো যায় না। সেই লক্ষ্যেই ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটরিং কমিটি গড়া হয়েছে জেলা শাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে। সেই কমিটির সদস্য করা হয়েছে অধ্যাপক গৌতম চন্দ্রকেও। ইতিমধ্যে সেই কমিটি কয়েকটি বৈঠকও করেছে। মশা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। গৌতমবাবু নিউটাউন কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)-এর সাম্মানিক পরামর্শদাতাও। তিনি বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে তিমেফস (টিইএমইএফওএস) কীটনাশক ব্যবহার করলে উপকার মেলে। পাশাপাশি, ব্যাসিলাস থুরিঙ্গিয়েনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে। বিটিআই মশার লার্ভা বিনাশ করে।”
[ পচা পুকুর থেকে উদ্ধার বস্তাবন্দি বাসি মাংস, পুর অভিযানে চাঞ্চল্য বাঁকুড়ায় ]
এই ব্যাকটেরিয়া মশার লার্ভা নিধনে প্রথম ইজরায়েলে ব্যবহৃত হয়েছিল। তারপর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিটিআই ব্যাকটেরিয়া মশার লার্ভা বিনষ্ট করলেও অন্যান্য জলজীবী প্রাণীর ক্ষতি করে না।
মনিটরিং কমিটির বৈঠকে গৌতমবাবু বর্ধমান জেলা প্রশাসনকেও এই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। শুক্রবার মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে বর্ধমানে অতিরিক্ত জেলাশাসকের (শিক্ষা) বাড়ির সামনের নর্দমায় গাপ্পি মাছ ছাড়া শুরু হয়েছে। গাপ্পি মাছও মশার লার্ভা খেয়ে নেয়। ফলে মশা জন্মাতে পারে না। সেখানে ছিলেন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব। তিনি বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে মশা জন্মাতে পারে এমন জলাশয়, নর্দমায় গাপ্পি মাছ ছাড়া তারই একটা অঙ্গ।” বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “পুরসভার তরফে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কীটনাশক স্প্রে, ধোঁয়ার জন্য কামান ব্যবহার করা হচ্ছে।”
মশার উপদ্রবের কথা বলতে গিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মৌমিতা দত্ত বলেন, “বিকেলের দিক থেকে মশার উৎপাত খুব বেড়ে গিয়েছে। একটু বসে থাকার উপায় থাকে না। বাইরে মশায় ছেঁকে ধরে। ঘরে থাকলে ধূপ বা লিকুইড ব্যবহার করি। তাতেও দুই-একটা মশা ঠিক চলে আসে।” ব্যবসায়ী অতনু বিশ্বাস বলেন, “চায়ের দোকান চালাই। বিকেল থেকে খরিদ্দাররা বসতেই পারেন না। মশার খুব উপদ্রব করে। ডিমের কাগজের ক্রেট জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিলেও নিস্তার মেলে না।” গৃহবধূ স্নিগ্ধা মুখোপাধ্যায় বলেন, “গত কয়েকসপ্তাহ ধরে মশার উপদ্রব যেন বেশি বেড়েছে। দুপুর থেকেই জানালা দরজা বন্ধ করে রাখতে হয়। যাতে ঘরে ঢুকতে না পারে।”
প্রশাসন মশা নিধনে বিভিন্ন পদক্ষেপ করায় খুশী বর্ধমানবাসী। যত দ্রুত সম্ভব মশার হাত থেকে মুক্তি চাইছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.