দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ‘ব্রহ্মদত্যির ঘরে’ উমা আরাধনা! পড়েই কেমন অবাক লাগছে, তাই না? ভাবছেন এ আবার হয় নাকি? এমনই পুজো প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হুগলির হরিপালের জেজুরে ঘোষ বাড়ির সদস্য। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021) ইতিহাস জানলে আপনার গায়ে কাঁটা দিতে বাধ্য।
ঘোষ বংশেরই এক পূর্বপুরুষ দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। ঠাকুরদালানে যেখানে মায়ের পুজো হয় সেই ঘরটি আজ ‘ব্রহ্মদত্যির ঘর’ বলে সকলের কাছে পরিচিত। কিন্তু কেমন এমন নাম, তা জানালেন ঘোষ পরিবারের সদস্য কাজল ঘোষ। তিনি জানান, আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে তাঁদের বংশের পুরোহিতদের পরিবারের এক সদস্যই আগে ওই ঘরে ব্রহ্মচারী হিসেবে থাকতেন। সেই সময় ওই এলাকার বাসিন্দারা সাত্যকি ডাকাতের নামে সকলে ভয়ে কাঁপতেন। সাত্যকি ডাকাত সেই সময় এক ব্রহ্মচারীর শিরশ্ছেদ করে তাঁকে হত্যা করে। তখন থেকেই এই ঘরটি ‘ব্রহ্মদত্যির ঘর’ বলে সকলের কাছে পরিচিত।
যুগের পর যুগ কেটে গেলেও পুজোর রীতিনীতিতে নেই কোনও পরিবর্তন। কাজলবাবু জানান, জন্মাষ্টমীতে ঠাকুরের গায়ে প্রথম মাটির প্রলেপ পড়ে। ষষ্ঠীতে বোধন। সপ্তমীতে ঠাকুরদালানে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জেজুর এবং আশেপাশের গ্রামের কৃতি ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য করা হয়। দেওয়া হয় বই। তবে করোনার কথা মাথায় রেখে চলতি বছর মাস্ক বিলির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে পাঁঠা বলির রীতি রয়েছে। নবমীতে পাঁঠার পাশাপাশি লেবুও বলি দেওয়ার প্রথা আছে।
এই পরিবারের পুরোহিত চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায় জানান, সপ্তমীতে হোমকুণ্ডে আগুন জ্বালানো হয়। সেই হোম শেষ হয় নবমীতে। সপ্তমী থেকে নবমী একটানা তিন দিন হোমকুণ্ডে আগুন জ্বলে। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, দশমীতে মাকে বরণ করার পর কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে নিকটবর্তী নদীতে নিরঞ্জন করা হয়। বিসর্জনের পর বাড়ির পুরুষরা বড় থেকে ছোট সবাই দুর্গাদালানে এসে দুর্গা মায়ের নাম লিখে যে যার মতো শান্তিজল নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। পুরোহিত বাড়িতে গিয়ে মহিলাদের শান্তির জল দেন। তারপর পুরোহিত ঠাকুরদালানে বসে থাকেন। নতুন পোশাক পড়ে বড় থেকে ছোট সকলে রঘুনাথজীর মন্দিরে আসেন। পুরোহিত তাঁদের হাতে ঠাকুরের প্রসাদী বেলপাতা দেন। সেই বেলপাতা নিয়ে শিবতলায় শিবমন্দিরে শিব এবং হাটতলায় সিদ্ধেশ্বরী মাকে প্রণাম করেন। এই পুজোর প্রস্তুতিতেই মুখিয়ে রয়েছেন সকলেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.