টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: অভিজ্ঞতা চার শতকের। শুধু বয়সের ভার নয়, বিষয় বৈচিত্র্যে এই পুজোর আলাদা পরিচিতি রয়েছে। বাঁকুড়ার সোনামুখির পুরানো হটনগর কালীমাতা নিছক একটি কালী পুজো নয়, এই কালীক্ষেত্রর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জেলার ইতিহাস, প্রাচীন সব প্রবাদ। এই পুজো ঘিরে রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির।
[অচল কয়েনও ‘সচল’, তাহেরপুরে শ্যামার আরাধনায় এটাই বার্তা]
জনশ্রুতি বলে এলাকার এক মুসলমান বৃদ্ধ বড়জোড়ার গ্রামে ধান বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় এক বালিকা তাকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়ার আবদার করেছিল। কাঁধে নিয়ে বৃদ্ধ এগোতে থাকেন, কিন্তু নিজের এলাকায় ফিরে আর বালিকাকে দেখতে পাননি। লক্ষ্য করেন একটি পাথরের খণ্ড রয়েছে তাঁর কাঁধে। সেই শিলা একটি গাছের নিচে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়। নয় নয় করে তা চারশো বছর হয়ে গেল। ওই এলাকায় হাট ছিল। সেই থেকে প্রথমে নাম হয় হট্ট তারপর তা পরিচিতি পায় হটনগর কালীমাতা নামে।
[ভূতের ভয় কাটাতে মোটরকালীর পুজো বালুরঘাটে]
সেই সময় দামোদর নদের নাব্যতা বেশি ছিল। নদীপথে মূলত ব্যবসা বাণিজ্য চলত। মালবাহী নৌকা নোঙর করত সোনামুখীর বন্দরে। সোনামুখী বাজারে আসত বিভিন্ন গ্রামের পাইকাররা। তারা ওই এলাকা থেকে মালপত্র কিনে নিয়ে যেত। সোনামুখী শহরে এলে হটনগর কালীকে পুজো দিতেন বণিকেরা। মন্দিরের পাশেই একটি প্রাচীন আঁকড় গাছ রয়েছে। সেই গাছের তলাতেই হাতি, ঘোড়া রেখে নিত্য পুজা হয়। এই আঁকড় গাছ অনেকটা বটগাছের মতো। তবে এর কাণ্ডে কাঁটা রয়েছে। সম্প্রতি এই মন্দিরটি নতুন করে তৈরি করা হয়। পুজো কমিটির সম্পাদক দেবমাল্য হালদার জানান, দীপান্বিতা অমবস্যায় বিশেষ পুজো হয় এই কালীমাতার।
[বাঁকুড়ার কালীতলার মাতৃ আরাধনায় ফিরে আসে অগ্নিযুগের ইতিহাস]
ছোট এই পুর শহরের অন্যতম প্রাচীন পুজো এটি। লিখিত কোনও লিপিবদ্ধ ইতিহাস না থাকলেও, মানুষের মুখে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের হাত ধরে বেঁচে রয়েছে হটনগর কালীর মাহাত্ম্য। প্রাচীন ধারা বজায় রেখেই কালীপুজোর দিন মাটির প্রতিমাকে কালো রং করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আঁধার নামার পর আকাশে সন্ধ্যাতারা উঠলে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে আঁকা হয় দেবীর চোখ। ষোড়শ উপাচারে মায়ের পুজো হয়। রাত দেড়টা নাগাদ শুরু হয় দেবী আরাধনা। পরের দিন সকাল সাতটা পর্যন্ত চলে পুজো-পাঠ। বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্তর কথায়, পরম্পরার ইতিহাস সঙ্গে জনশ্রুতি। এরই টানে হটনগরের এই পুজো পাল্লা দেয় তথাকথিত বিগ বাজেটের পুজোগুলিকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.