নিজস্ব সংবাদদাতা: আগের মতো জাঁকজমক আর নেই৷ তবে রয়ে গিয়েছে সাবেকিয়ানা, ঐতিহ্য৷ সন্ধিপুজোর প্রাক্কালে বন্দুক দিয়ে শূন্যে গুলি ছোড়ার প্রাচীন রীতি আজও প্রচলিত জগদ্দল থানার অন্তর্গত আতপুরের ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজোয়৷
এই বনেদি বাড়ির পুজো এবার পা দিচ্ছে ১৫৯ বছরে৷ সিপাহি বিদ্রোহের বছরে ইংরেজ সরকারের সামরিক বিভাগের মেজর হরচন্দ্র ঘোষ এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন৷ তবে নানান কারণে আজ এই পুজোর জৌলুস অনেকটাই কমে গিয়েছে৷
শিয়ালদহ মেন শাখার অতি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন শ্যামনগর৷ এই শ্যামনগরের উত্তর দিকের শহর আতপুর৷ বাংলার নবাব শায়েস্তা খাঁর আমলে ১৬৭৯ সাল থেকে ১৬৮৮ সালের মধ্যে এই ঘোষবাড়ির পূর্বপুরুষরা মালদহের গৌড় নগরী থেকে আতপুরে চলে আসেন৷
জানা গিয়েছে, বৈষ্ণব মনোভাবাপন্ন কাশীনাথ ঘোষ ১৭৯৮ সালে বাড়ির নিমগাছ কেটে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার দারু বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে নিত্যপুজোর প্রচলন করেন৷ সেই বছরেই ১৭ হাত উঁচু রথ তৈরি করে ধুমধাম করে শুরু হয় রথযাত্রা উৎসব৷ কালক্রমে আতপুরের ঘোষবাড়ি পরিণত হয় রথবাড়িতে৷ ১৮৫৭ সালে কাশীনাথ ঘোষের ছেলে হরচন্দ্র ঘোষ দশভুজা দুর্গাপুজোর সূচনা করেন এখানে৷ প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এখানে এখনও একচালার সাবেকি ধাঁচের প্রতিমা পুজো হয়৷
ঘোষ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাড়ির নাটমন্দিরেই প্রতিমা গড়া হয়৷ কাঠামো পুজো হয় রথের দিনে৷ মহাষ্টমীর দিন পুরনো রীতিনীতি মেনেই হয় কুমারী পুজো৷ তবে বলিপ্রথা নেই৷ বাড়ির বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে সন্ধিপুজোর সূচনা হয়৷ সন্ধিপুজোর শেষে বাড়ির পাঁচজন পুরুষ মাথায় মাটির সরা রেখে ধুনো পোড়ান৷ সেই পর্ব মিটতেই বাড়ির ছোট শিশুরা তাঁদের কোলে এসে বসে৷ বংশপরম্পরায় এই প্রথা অটুট এই ঘোষবাড়িতে৷
পুজোর চারদিন প্রতিমার সামনে কোনওরকম অন্নভোগ নিবেদন করা হয় না৷ ঘিয়ে ভাজা লুচি, হলুদ ছাড়া তরকারি, হালুয়া, নাড়ু, বড় আকারের সন্দেশ, ফল, নৈবেদ্য সহযোগে প্রসাদ নিবেদন করা হয় প্রতিদিন৷ রথবাড়ির ভাসানও বৈচিত্র্যময়৷ দু’টি নৌকার মাঝে প্রতিমা বসিয়ে দেওয়া হয়৷ মাঝগঙ্গায় গিয়ে নৌকা দু’টিকে সরিয়ে দিয়ে দেবীকে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়৷ কাঠামোটা নিয়ে আসা হয় ঠাকুর দালানে৷ শুরু হয় বিজয় উৎসব৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.