রিন্টু ব্রহ্ম, বর্ধমান: পথ দেখিয়েছিল কেরালা বয়েজ৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও একই গাড়িতে সফর করেছিলেন তিন, চারজন বন্ধু৷ সকলের হাতে আলাদা আলাদা দলের পতাকা৷ একই গাড়িতে বেরিয়ে তাঁরা বুঝিয়েছিলেন,বন্ধুত্ব সবকিছুর উর্ধ্বে৷ এবার সেই রাজনৈতিক সৌজন্যের ছবি দেখা গেল বর্ধমান শহরেও৷ সেখানে দেখা গেল, চায়ের দোকানে নির্ভেজাল আড্ডায় বসে বন্ধুরা৷ একেকজনের বাইকে একেক দলের পতাকা৷ সেসব বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে চায়ের দোকানেই জমে গিয়েছে আড্ডা৷
রাজনৈতিক মতপার্থক্য, হিংসা বা অশান্তির উর্ধ্বে উঠে যে বন্ধুত্বই গণতন্ত্রের শক্তিশালী ভিত, সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বর্ধমান শহরের একদল যুবক। রাজ্যের চতুর্থ দফার ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংঘর্ষ রুখতে যেখানে নিরাপত্তা নিয়ে সজাগ কমিশন, সেখানে এ এক অনবদ্য দৃশ্য। কারও বাইকে লাগানো ঘাসফুল পতাকা, কারও বা পদ্ম চিহ্ন আঁকা৷ হাত কিংবা কাস্তে-হাতুড়ি-তারা সম্বলিত পতাকাও উড়ছে কারও কারও বাইকে৷ এত ধরনের রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও, ঝগড়া-অশান্তি নয়, একেবারে খোস মেজাজে চায়ে চুমুক দিতে দিতে আড্ডা জমালেন এই যুবকরা৷ চায়ের আড্ডায় কান পেতে শোনা গেল, একে অন্যের কাঁধে হাত রেখেই যে যার মতাদর্শগত যুক্তি সাজিয়ে চলেছে৷ দিনভর যার যার দলের হয়ে প্রচার শেষে ক্লান্ত হয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার ফাঁকেই যেন সমস্ত আড্ডা। আর রাজ্যের চতুর্থ দফা ভোটের আগেই সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বর্ধমান শহরের ভাতছালায় ‘সোমনাথের টি স্টলেই’ বন্ধুত্বের আড্ডার ঠেক। আর সেখান থেকেই উঠে এসেছে এই বিরল ছবি। তাই দেদার ছবি শেয়ার করছে বাংলার যুবক যুবতীরা। এর আগেই ভাইরাল হয়েছিল এক গাড়িতে সব দলের পতাকা নিয়ে কেরালা বয়েজদের লং ড্রাইভে বেরোনোর ছবি। এরপরই বর্ধমান বয়েজ। তাঁদের থেকেই জানা গেল তাঁদের রাজনীতি ও বন্ধুত্বের গল্প। ভোটের আগেই দিনই একসঙ্গে পাওয়া গেল বন্ধুদের৷ পেশায় স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক বিকাশ সোনাকার বামপন্থী দলের সমর্থক, ম্যানেজমেন্ট কলেজ ছাত্র আকাশ বিজেপির সমর্থক, বেসরকারি কাজে যুক্ত সৌম্য ঘোষ তৃণমূল দলের সঙ্গে যুক্ত৷ অন্যদিকে স্থানীয় যুবক বাবলু দাস কংগ্রেসের সমর্থক। সঙ্গে প্রত্যেকেরই পছন্দের রাজনৈতিক দলের পতাকা। সেই নিয়েই জমেছে জমাজমাট আড্ডা। আর সঙ্গে আরও অন্য বন্ধুরাও। সেই আড্ডার সঙ্গে একের পর এক চা বানাচ্ছেন চাওয়ালা সোমনাথ রায়।
জানা গেল, সোমনাথের চা খেতেই দোকানে এসে এঁকে অপরের সঙ্গে পরিচয়। সেখান থেকেই বন্ধুত্বের সূচনা। পুজো থেকে নিউইয়ার কিংবা হোলি – সব কিছুতেই চায়ের দোকানের আড্ডায় এসে হয় সেলিব্রেশন। তাই ভোট উৎসবেও যে যার পছন্দের পতাকা সঙ্গে নিয়েই বসেছে আড্ডায়। বিকাশের কথায়, ‘আমরা চাই মানুষ রাজনীতির জন্য বন্ধুত্ব, পাড়া, প্রতিবেশীর সম্পর্ক না ভুলে হিংসায় না জড়াক। রাজনীতি ও বন্ধুত্ব থাক আলাদা। রক্ত নয়, বন্ধুত্ব চাই।’ চায়ের দোকানের সোমনাথ জানান, তাঁর প্রায় দশ বছরের চায়ের দোকান। অনেকে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আসে। এরাও আসে। এরা সবাই খুব ভাল বন্ধু। সকলেই নিজের দলের কথা যুক্তি দিয়ে বলে। তর্কাতর্কিও হয়৷ কিন্তু কখনই হিংসার কোনও প্রকাশ নেই৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.