ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: কালী আরাধনা হয় রাজ্য জুড়ে। তবে শুধু কালীপুজোর জন্য কোন শহরের আলাদা পরিচয়? এর উত্তর আর বলার দরকার পড়ে না। বারোয়ারি পুজোর নিরিখে রাজ্যের সেরা কালীক্ষেত্র বারাসত। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদরে এখন থেকে কৌতূহলীদের ভিড়।
[কাশ্মীরে শান্তি ফেরাবেন শ্যামা, জঙ্গির বিচারের দায়িত্বেও দেবী]
বারাসতের মাতৃ আরাধনার ঐতিহ্য প্রায় ৬ দশকের। “পাহাড়ে কালী”- বারাসতে প্রথম থিম। চারকোণা মণ্ডপ। তার মধ্যে কাদা মাখানো কাপড় দিয়ে তৈরি পাহাড়। সেই পাহাড়ের সামনে অপরূপ দেবী প্রতিমা। কর্মকর্তাদের ভিআইপি পাস ছাপাতে হয়নি ঠিকই, তবে আশপাশের পাড়ায় ভালই আলোড়ন ফেলেছিল রেজিমেন্ট। সেই থেকে টক্কর শুরু। ময়দানে নেমে পড়ে বর্ণালী সংঘ, মিলনী আর দেশবন্ধু ক্লাবও। এরপর একে একে চলে আসে ছাত্রদল, ব্যায়াম সমিতি, শতদল, নবপল্লি সর্বজনীন, পায়োনিয়ার অ্যাথলেটিক। বছর চল্লিশ পর সেই কাদা মাখা পাহাড় একদিন অমরনাথ হয়ে গেল। ২০০৪-এ পায়োনিয়ারের সেই ১২০ ফুট উঁচু প্যান্ডেলের চর্চা এখনও মুখে-মুখে ফেরে।
[সাধক রামপ্রসাদের জীবনের এই ৩ কাহিনিতে আজও বিস্মিত ভক্তরা]
বারাসতের কালীপুজো মানে যেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখা। কেএনসিতে এলে মনে হবে যেন কোনারকের মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে। একটু হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন মায়ানমার! পায়োনিয়ারের পুকুরে যেন ইয়েমেন লেকের বৌদ্ধ মন্দির। শুধু কি বিশ্বভ্রমণ! নবপল্লিতে ‘বাহুবলী’র প্রাসাদটাই স্ক্রিন থেকে বেরিয়ে এসেছে যেন! ভিড় টানার দৌড়ে এই ব্র্যান্ডেড ক্লাবগুলো এগিয়ে থাকলেও ঘাড়েই নিশ্বাস ফেলছে শতদল, ছাত্রদল, বিদ্রোহীরা। নতুন প্রজন্মের পুজোগুলির মধ্যে বিরাট কোহলির মতো উত্থান সন্ধানীর। কয়েক বছর আগেও বারাসতের কালীপুজো মানেই ছিল সুভাষ মাঠের মেলা। মাঠকে অক্ষত রাখতে মেলা বন্ধ করে প্রশাসন। এ বছর হেলা বটতলা মোড়ের মিলনী মাঠের মেলা সে অভাব পূরণ করবে। কিছুটা হাঁটলেই রেজিমেন্ট। গত কয়েক বছর তারা বড় কোনও চমক না দিলেও, এবছরের আয়োজন নজর কাড়বেই বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। মণ্ডপ যাই হোক না কেন রেজিমেন্টর মাতৃ প্রতিমা বারাসতের মধ্যে অদ্বিতীয়। ফি বছর দেবীর অপরূপ মুখের টানে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমান। রেজিমেন্টের প্রতিমা কৃষ্ণনগর থেকে আসে। দেবীর রূপ থাকে অপরিবর্তিত। তবে মায়ের দু’পাশে প্রতি বছর আলাদা পৌরাণিক কাহিনির দৃশ্য তুলে ধরেন শিল্পীরা।
[শিল্পী এবং চাহিদার অভাবে আঁধারেই বাংলার ভূতের ভবিষ্যৎ]
বারাসতের পুজোর পরিধি বাড়তে বাড়তে পাশের শহর মধ্যমগ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় সুভাষ ময়দানের সামনে দাঁড়ালে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। আকার আকৃতিতে হুবহু ইংল্যান্ডের নারায়ণ মন্দির! তবে শিল্পী তার সঙ্গে নিজস্ব ভাবনার রং মেশান। আসল মন্দিরিটি সাদা। মধ্যমগ্রামের ইয়ং রিক্রিয়েশন ক্লাবের মণ্ডপটি কালচে খয়েরি। গোটা মণ্ডপের গায়ে ঝাড়বাতির কাচ দিয়ে নিখুঁত নকশা। দেখে মনে হবে পাথরের মন্দিরে হিরের কারিগরি। কালীপুজোর মানচিত্রে বারাসত-মধ্যমগ্রামের এই উজ্জ্বল উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে আবহাওয়া মন্দ না হলে কয়েক লক্ষ দর্শনার্থী ঢুঁ মারবেন এই দুই শহরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.