সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শহরের মধ্যে ছোট্ট এক চিন। গুটিকতক পরিবার। বাড়িতে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে চিনা সংস্কৃতির ছাপ রয়েছে। নিয়ম করে চিনা নববর্ষও পালন করেন তাঁরা। ব্যস এইটুকুই। চিনের সঙ্গে সম্পর্ক বলতে এইটুকুই। পিতৃভূমি চিন হলেও তাঁরা ভারতবর্ষকেও মাতৃভূমি করে নিয়েছেন। আপন করে নিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকেও। পূর্বপুরুষ চিনা হলেও তাঁরা আদ্যপান্ত ভারতীয় হয়ে উঠেছেন। ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদও করছেন বর্ধমান শহরের চিনা বসতির বাসিন্দারা। সাফ জানাচ্ছেন, চিন দাদাগিরি করছে। করোনা ছড়িয়ে এখন পিঠ বাঁচাতে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলছে চিন। বলছেন বর্ধমানের চিনা পরিবারের সদস্য সিয়াংজি ওয়াং ও হাউজি ওয়াং।
শহরের রানিগঞ্জ বাজার মোড়ে থাকেন ওই চিনা পরিবারগুলি। গায়ের রঙ, শারীরিক গঠন ও নাম-পদবিতে চিনা ছাপ স্পষ্ট। এর বাইরে তাঁরা পুরোপুরি বাঙালি, ভারতীয়। রানিগঞ্জ বাজারে জুতোর দোকান, রেস্তরাঁ, বিউটি পার্লার রয়েছে তাঁদের। চিনের ওয়াংঝাও প্রদেশের মাইজাও শহরের বাসিন্দা ওয়াং পরিবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অর্থনৈতিক কারণে দেশ ছেড়েছিলেন। এসেছিলেন কলকাতায়। তার পর ব্যবসায়িক পেশার তাগিদে এসেছিলেন বর্ধমান শহরে। শুরু করেছিলেন ওয়াং কোম্পানির জুতোর ব্যবসা। বর্তমান প্রজন্মের সিংয়াজি ও হাউজি জানান, তাঁদের বাবা তিন বছর বয়সি দিদিকে চিনে মামার কাছে রেখে ভারতে চলে এসেছিলেন। সেই দিদির খোঁজে সিয়াংজি চিনে গিয়েছিলেন বছর দশেক আগে। হাউজিও একবার গিয়েছিলেন সেখানে।
তাঁরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, ভাত, আলুপোস্তকে আপন করেছেন তাঁরা। বর্ধমানের স্কুল-কলেজে লেখাপড়া শিখেছেন। তবে বিবাহের জন্য রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা চিনা পরিবারকেই প্রাধান্য দেন তাঁরা। তবে বিবাহের ক্ষেত্রে বাঙালি পরিবারও আর ব্রাত্য নয় তাঁদের কাছে। এদিন চিনা হামলার তীব্র নিন্দা করে তাঁরা বলেন, “করোনা নিয়ে চাপে রয়েছে চিন। পিঠ বাঁচাতে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলছে। চিন ইট ছুঁড়লে তাদের পাটকেল সহ্য করতেই হবে।” চিনা বংশোদ্ভূত হলেও আদ্যপান্ত ভারতীয় ওয়াং পরিবারের কণ্ঠে চিনা আগ্রাসনের প্রতি তীব্র ঘৃণা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.