স্টাফ রিপোর্টার: মজুত থেকেও বাজারে নেই৷ নোট কাণ্ডের ধাক্কায় উত্তরবঙ্গের হিমঘরেই বন্দি কয়েক হাজার টন আলু৷
পাঁচশো-হাজারের নোট দেখলেই মুখ ফেরাচ্ছেন পাইকাররা৷ খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে খুচরো বিক্রেতাদের৷ ফলে উত্তরবঙ্গ জুড়ে আলুর জোগানে ভাটার টান৷ অর্থনীতির সূত্র মেনেই তাই চড়ছে দামের পারদ৷ এদিকে দু’সপ্তাহের মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে৷ তখন কমবে পুরনোর কদর৷ ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, তখন মজুত পুরনো আলু হয় ফেলে দিতে হবে৷ না-হয় পচে নষ্ট হবে৷
উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক দাস বলেছেন, “হিমঘরে মজুত আলু দু’সপ্তাহের মধ্যে বাজারে পাঠাতে না পারলে বিপদ বাড়বে৷ ওই আলু আর চলবে না৷ ফেলে দিতে হবে৷ কারণ, তখন নতুন আলু উঠে যাবে৷” ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের ৫৪টি হিমঘরে দেড় হাজার কোটি প্যাকেট আলু মজুত ছিল৷ প্রতিটি প্যাকেটের গড় ওজন পঞ্চাশ কেজি৷ সেই আলুর ৩৩ শতাংশ এখনও মজুত রয়েছে৷ ক্রেতা থাকলেও বাইরে বের করা সম্ভব হচ্ছে না৷ কারণ, গেরো বাতিল পাঁচশো-হাজারের নোট৷
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, গত বছর নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে দিনে দেড়শো ট্রাক আলু বাজারে পৌঁছেছে৷ প্রতি ট্রাকে ২০ টন আলু থাকে৷ এবার মাসটা ভালই শুরু হয়েছিল৷ কিন্তু বুধবার থেকে দিনে দশ ট্রাক আলুও বাজারে যাচ্ছে না৷ কেন?
ধূপগুড়ির পাইকারি আলু ব্যবসায়ী দেবব্রত চক্রবর্তীর কথায়, “খুচরো বিক্রেতাদের বেশিরভাগ পাঁচশো-হাজার টাকার নোট নিয়ে আসছেন৷ বাধ্য হয়েই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে৷” ঘোরালো পরিস্থিতিতে যে চাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমঘরে আলু মজুত রেখে কিছুটা বাড়তি লাভের আশা করেছিলেন, তাঁদের মাথায় হাত৷ ময়নাগুড়ির চাষি শিবেন রায় জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর নিজের খেতের নতুন আলু বাজারে যাবে৷ তখন হিমঘরে মজুত আলু ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না৷ একই আশঙ্কায় ভুগছেন ধূপগুড়ির গাদং এলাকার চাষি গৌরাঙ্গ দাস৷ এদিকে বাজারে আলুর সরবরাহ কমতেই দাম চড়ছে৷ শুক্রবার পাইকারি বাজারে সাড়ে আট টাকা কেজি দামে আলু বিক্রি হলেও ক্রেতাদের খুচরো বাজারে সেটা পনেরো থেকে কুড়ি টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে৷ কেন দামের এমন ফারাক?
জলপাইগুড়ির দিনবাজার সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হরিবালা সাহা বলেন, “পকেটে টাকা থাকলেও সবজি কেনা সম্ভব হচ্ছে না৷ পাঁচশো-হাজারের নোট দেখা মাত্র আড়তদার ফিরিয়ে দিচ্ছেন৷ খুব সামান্যই আলু বাজারে আছে, তাই দাম বাড়ছে৷” ময়নাগুড়ি পুরাতন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী পরিমল রায় জানিয়েছেন, খুচরো ব্যবসার বেশিটাই এখন চলছে ধারবাকিতে৷ তার উপরে আলু কিনতে হন্যে হতে হচ্ছে৷ পাইকারি ব্যবসায়ীরা আগাম জানিয়ে দিচ্ছেন, খুচরো না-দিলে কিছু করার নেই৷ তাই বাধ্য হয়ে যে অল্পকিছু একশো-পঞ্চাশের নোট হাতে আসছে, সেটা দিয়ে যতটুকু সম্ভব আলু কিনে দোকান চালাতে হচ্ছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.