বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: রক্ত নিয়ে কালোবাজারি ও দুর্নীতির অভিযোগে মূল অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু নতুন হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে প্রথম দিনই বিপাকে পড়লেন অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী (Health worker)। তাঁকে হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে বাধা তো দেওয়া হলই। তাঁকে ঘিরে ধরে পরিয়ে দেওয়া হল জুতোর মালা! শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার (Nadia) হাঁসখালি থানার বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল চত্বরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়।
হাসপাতালে প্রবেশের পথে বাধা পেয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী জড়িয়ে পড়েন ধস্তাধস্তিতে। তাকে ‘রক্তচোর’ বলে গালিগালাজ করা হয়। তারপরই তার গলায় এক মহিলা জুতোর (Shoe) মালা পরিয়ে দেন। এসবের জেরে শেষপর্যন্ত হাসপাতালে যোগ দিতে পারেননি ওই স্বাস্থ্যকর্মী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় শেষপর্যন্ত হাঁসখালি থানার পুলিশকে খবর দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।পুলিশ এসে জনতার বিক্ষোভের মধ্যে থেকে ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স করে ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও নিমেষের মধ্যে ভাইরাল (Viral) হয়ে পড়ে।
এদিনের ঘটনার বিষয়ে হাঁসখালি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. বীরেন মজুমদার জানিয়েছেন, ”আসলে এটা প্রচুর মানুষের উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে যোগদান করার জন্য সরকারি অর্ডার রয়েছে, তাই তাকে তো যোগদান করাতেই হবে। কিন্তু এদিন পরিস্থিতি যে অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল, তাতে ওই স্বাস্থ্যকর্মী শারীরিক দিক দিয়ে নিগৃহীত হতে পারতেন। তাই পুলিশের সহযোগিতায় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে শক্তিনগর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. স্বপন কুমার দাসের বক্তব্য, ”কৌস্তভ কুণ্ডু নামে ওই কর্মীকে বদলি করা হয়েছে। এলাকার লোকজনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের এত স্টাফ নেই, যে তার বদলে অন্য কাউকে সেখানে পাঠানো হবে। গোটা বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।”
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগর (Krisnanagar) শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে রক্ত নিয়ে কালোবাজারি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত তিন স্বাস্থ্যকর্মীকে বদলি করা হয়েছে। তাদের নাম কৌস্তভ কুন্ডু, সৃজন বাগচী ও নীহাররঞ্জন ঘোষ। তার মধ্যে কৌস্তুভ কুন্ডুকে বদলি করা হয়েছে বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে।যদিও সেই খবর জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে কৌস্তভ কুণ্ডুর ছবি দিয়ে হাসপাতাল চত্বরে পোস্টার দেওয়া হয়। শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। এদিন পৌনে দশটা নাগাদ হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করে পথ আটকে দেওয়া হয়। কৌস্তভ আসার পরেই তাঁকে ঘিরে ধরে শুরু হয়ে যায় তুমুল বিক্ষোভ। ‘রক্তচোর’ বলে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। পরানো হয় জুতোর মালা। ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.