নন্দন দত্ত, সিউড়ি: চার চারবারের সাংসদ। প্রতিবারই ভোটের ব্যবধান বেশ ঈর্ষণীয়। আর চতুর্থবার বীরভূমের সাংসদ হয়েই ‘গদ্দার’দের চিহ্নিত করে দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দিলেন শতাব্দী রায়। শনিবার দুবরাজপুর পুরসভা থেকে তাঁকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই বিজয় উৎসবের মঞ্চ থেকেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা শিবঠাকুর মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রীকে সকলের সামনে দাঁড় করিয়ে তীব্র ভর্ৎসনা করলেন শতাব্দী। তাঁদের সঙ্গে বিজেপির যোগ আছে, বিজেপির হয়ে ভোটে কাজ করেছন, এমনই অভিযোগ তুলে সাংসদের স্পষ্ট বার্তা, সব প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।
২০২২ সালে বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) গ্রেপ্তারির পর আচমকাই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন শিবঠাকুর মণ্ডল। গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে সিবিআই (CBI) যখন দিল্লি নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করছিল, তখনই শিবঠাকুর থানায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, অনুব্রত তাঁকে পার্টি অফিসে ডেকে খুনের হুমকি দিয়েছেন। নতুন করে এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয় অনুব্রতর বিরুদ্ধে। আর নতুন মামলার জেরে তাঁর দিল্লিযাত্রা খানিকটা পিছিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়ে শিবঠাকুর হারলেও তাঁর স্ত্রী ভোটে জিতে বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন।
এবার চব্বিশের লোকসভা ভোটে (2024 Lok Sabha Election) শিবঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী বিজেপির হয়ে ভোট করেছেন বলে অভিযোগ তুললেন চারবারের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় (Satabdi Roy)। শনিবার দুবরাজপুরে ব্লক তৃণমূলের কর্মীদের আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় সকলের সামনে শিবঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী লিপিকাকে দাঁড় করিয়ে চরম ভর্ৎসনা করেন সাংসদ। শিবঠাকুরের উদ্দেশে বলেন, ”তোমাদের এলাকায় হার হয়েছে না জিত হয়েছে? যাঁরা এতদিন আমাকে ভুল বলেছে, সেই ভুল আমি স্বীকার করতে রাজি। আমি সত্যিই কোনও কোনও জায়গায় ভুল ছিলাম। কিন্তু তাঁরা ভোটে জিতিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে আমি ভুল ছিলাম, তাঁরা ঠিক। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে তা হয়নি। তোমার কাজেই প্রমাণ যে তুমি ভুল ছিলেন। আর আমাকেও ভুল বুঝিয়েছ। এবার দেখো তোমার ভবিষ্যৎ।” এর পরই শতাব্দী স্পষ্ট বার্তা দেন, কারা কারা বিজেপির হয়ে ভোটে সাহায্য করেছে, তাঁরা চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। এই ‘গদ্দার’দের বহিষ্কার করা হবে।
যদিও অনুষ্ঠান মঞ্চে সকলের সামনে মুখ পোড়ার পরও শিবঠাকুর অবিচল। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ”উনি এরকম কিছু বলেছেন বলে তো আমি শুনিনি। আমার কানে আসেনি। হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমরা হেরেছি। ১৮টি গ্রাম সংসদের মধ্যে হিন্দু অধ্যুষিত ১০টিতেই হেরে গিয়েছি।” বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, বহিষ্কারের বিষয় এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তা কোর কমিটি আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক করবে। এদিনের সংবর্ধনা সভায় ভোটে বেশি লিড পাওয়া প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতকে সোনার মেডেল ও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.