আটলা গ্রামে বামাখ্যাপার মন্দির
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: সদাইপুরের পর এবার বামাখ্যাপার জন্মস্থান আটলা গ্রামে চুরি। গ্রামে একই রাতে পাঁচ-পাঁচটি মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটল। সোনা-রুপার গয়না, প্রণামী বাক্সের দান-সহ প্রায় লক্ষাধিক টাকা চুরি গিয়েছে বলে মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি। এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে খবর। এমনকী, হদিশ মেলেনি চোরাই সামগ্রীরও। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীরা
বীরভূমের রামপুরহাট থানার তারাপীঠ লাগোয়া আটলা গ্রাম বামাখ্যাপার জন্মস্থান। সোমবার সকালে গ্রামের পাঁচটি মন্দিরে চুরির ঘটনাটি নজরে পড়ে সেবাইতদের। চুরি হয়েছে গ্রামের দু’টি কালীমন্দির, দু’টি বাম-তারা মন্দির ও একটি নারায়ণ মন্দিরে। বাম-তারা মন্দিরের সেবাইত হিমাদ্রি শেখর রায় জানান, তাঁদের মন্দির থেকে মা তারা ও বামদেবের মাথার চাঁদির মুকুট, সোনার হার, কানের দুল ও প্রণামী বাক্স-সহ লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী খোয়া গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, “দুষ্কৃতীরা তিনটি গেটের তালা ভেঙে গয়না, টাকা পয়সা নিয়ে গিয়েছে। সকালে উঠে দেখি আমার বাড়ির সদর দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। এরপর পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে মন্দিরে গিয়ে দেখি সব তালা ভাঙা। সোনা-রুপোর গয়না ও প্রণামীর বাক্স নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।”
পাশেই আর একটি মন্দির থেকে মা তারার সোনার জিভ, মাথার টিকলি ও প্রণামী বাক্স ভেঙে টাকা চুরি গিয়েছে। বিল্ববাসিনী কালীমন্দিরেও চুরি হয়েছে। এখানে প্রতিমার মাথার চাঁদির মুকুট, সোনার জিভ, কানের দুল, কপালের টিপ প্রণামী বাক্সের কিছু টাকা ও খাঁটি পিতলের ঘণ্টা-কাঁসর নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ওই মন্দিরে এই নিয়ে তিন-তিনবার চুরির ঘটনা ঘটল বলে জানিয়েছেন সেবাইত সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী মাধুরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ সকালে মন্দির ধুতে গিয়ে দেখি তালা ভাঙা। ঠাকুরের সমস্ত গয়না চুরি হয়ে গিয়েছে। আগের দু’বারের চুরির কিনারা আজও করতে পারেনি পুলিশ।” নারায়ণ মন্দিরের তালা ভাঙা, চার-পাঁচটা কষ্টিপাথরের নারায়ণ শিলা, কষ্টিপাথরের সূর্যদেবের মূর্তি, পাঁচটি রুপোর ও একটা সোনার পৈতা এবং ঘণ্টা খোয়া গিয়েছে। এই মন্দিরেও তিন বছরে তিনবার চুরির ঘটনা ঘটল বলে দাবি সেবাইত উজ্জ্বলেন্দু ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, “বার বার চুরির ঘটনা ঘটলেও কিনারা করতে পারছে না পুলিশ। বামাখ্যাপার মতো একজন সাধকের গ্রামেও পুলিশের কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে দুষ্কৃতীরা গ্রামের মন্দিরগুলিতে বিনা বাধায় চুরি করে চলেছে।’ রামপুরহাট পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করা হচ্ছে এই ঘটনাগুলি একটি দলেরই কাজ। দলটিকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।
দিন কয়েক আগে দুই মন্দিরে চুরিকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বীরভূমের সদাইপুর। ওসি-কে ক্লাবে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন চিনপাই গ্রামের বাসিন্দারা। অবরোধ করে রাখা হয়েছিল জাতীয় সড়ক। চাপের মুখে সদাইপুর থানার ওসি-কে সরিয়ে দেয় বীরভূম জেলা পুলিশ। ক্লোজ করা হয় মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা্ দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকেও।
ছবি: সুশান্ত পাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.