Advertisement
Advertisement
Murshidabad Lok Sabha Election News

কল্যাণ প্রকল্প মুছেছে বিড়ি শ্রমিকদের দুঃখের দিনলিপি

গত এক দশকে শ্রমিকদের জীবনের মানে এসেছে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন।

The West Bengal Beedi workers welfare scheme has erased the sad days of beedi workers
Published by: Arpan Das
  • Posted:April 19, 2024 8:42 pm
  • Updated:April 19, 2024 8:42 pm

অরিঞ্জয় বোস, বহরমপুর: বিড়ি বাঁধা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। এমন বিধিসম্মত সতর্কীকরণ তাঁদের কেউ দেয়নি। দিলেও কিছু করার ছিল না। সারাদিনে হাজার বিড়ি বাঁধলে হাতে আসে দেড়শো টাকা। উপার্জনের সেটিই একমাত্র উৎস। পেশার তাগিদে তাই মুখ তোলার অবসর নেই মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বিড়িশ্রমিকদের (Beedi Workers)। তবে এক কালে তাঁদের যে অবস্থা ছিল তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের শ্রমদপ্তর বিড়ি শ্রমিকদের জন্য যে ওয়েলফেয়ার স্কিম (The West Bengal Beedi Workers) চালু করেছিল, তার সুফল দেখছে মুর্শিদাবাদ। গত একদশকে শ্রমিকদের জীবনের মানে এসেছে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন।

বলতে গেলে, গোটা জেলার অর্থনীতির ভরকেন্দ্র এই বিড়ি বাঁধার কাজ। জঙ্গিপুর মহকুমাতেই বহু মানুষের এটাই একমাত্র রুটিরুজি। চারিদিকে ভোটের বাদ্যি বাজছে। নতুন নতুন প্রতিশ্রুতির ছড়াছড়ি। গরমের হাঁসফাস উপেক্ষা করেই তুঙ্গে ভোট প্রচার। প্রার্থীদের প্রচারের হালহকিকত তল্লাশ করতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। তবে এসবের দরুন শ্রমিকদের রোজকার জীবনে বিশেষ হেলদোল নেই। ভোটের মুখে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল, প্রতিদিনের মতোই তাঁরা কাজে বসে গিয়েছেন। শ্রমিকদের অধিকাংশই মহিলা। কেউ মাপে মাপে কাটছেন কেন্দু পাতা। কারও আবার পোষা আঙুলে সুতোর পাকে পাতার পেটে বাঁধা হয়ে যাচ্ছে তামাক। কেউ আবার টপাটপ কঞ্চির কাঠি দিয়ে বিড়ির মুখ বন্ধ করছেন। সবটাই এত দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে হচ্ছে যে দেখে তাক লেগে যায়। এই বিড়ি চালান হয়ে যাবে গোটা রাজ্যে। অর্থনীতির হিসাবপত্তরের আরও অনেক পরত আছে। তবে সেসব পেরিয়ে হাতের কাজেই মন শ্রমিকদের।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মে মাসের শুরুতেই মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ, প্রস্তুত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও]

সামান্য পিছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, কয়েক বছর আগেও অবশ্য বিড়ি শ্রমিকদের জীবনযাত্রা এত সহজ ছিল না। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, রাজ্যে প্রায় ২০ লক্ষ শ্রমিক এই কাজ করে থাকেন। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে এই শ্রমিকদের বড় অবদান আছে। তাই তাঁদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্যও সচেষ্ট হয় রাজ্য সরকার। ২০১৩ সাল থেকেই চালু হয়েছে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ প্রকল্প, যেখানে দুই কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা রাজ্যের থেকে পেতে শুরু করেন শ্রমিকরা। মূলত এই প্রকল্পের কল্যাণেই তাঁদের জীবনের হালচাল বদলাতে শুরু করে। ঘরবাড়ি থেকে সামগ্রিক গেরস্থালির চেহারাটাই বদলে যায়। টানাটানির দিন পেরিয়ে অনেকেই নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ তাঁদের সন্তানকে শহরে পাঠিয়ে নামী কলেজে পড়াচ্ছেনও। এক সময় এসব চিন্তাও করতে পারতেন না। তবে, দিন যে বদলেছে তা অস্বীকার করছেন না তাঁরা। এ ছাড়া আছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা। মহিলাদের ক্ষেত্রে তা স্বনির্ভর হওয়ার সুবিধা দিয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডও চিন্তা ঘুচিয়ে দিয়েছে অনেকটাই। সব মিলিয়ে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ভালো রাখার যে সংকল্প নিয়েছে রাজ্য, তার জেরেই বদলাতে শুরু করেছে মুর্শিদাবাদের বিড়ি শ্রমিকদের জীবনের পাঁচালী।

[আরও পড়ুন: সৌদিতে অনাহারে দিন কাটছে, ‘বাড়ি ফেরান’, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি হুগলির ২ পরিযায়ী শ্রমিকের]

তবে মজুরি নিয়ে ক্ষোভের আঁচও পাওয়া গেল ইতিউতি। তা মূলত নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধেই। এলাকার প্রবীণ একজন শ্রমিক ক্ষোভ জানিয়ে বললেন, “মজুরি নিয়ে আমাদের সমস্যা। কেউ কেউ দেড়শোর বদলে একশো দশ কি কুড়ি টাকা দিচ্ছে। তাও হপ্তা পেতে সময় লেগে যায়।” তার উপর পাতার কারণে বিড়ি বাতিল হওয়ার ঝক্কি তো আছেই। স্থানীয় যুবকের তাই দাবি, “দেড়শো টাকায় এখন কিছু হয় না। মজুরি না বাড়লে আমাদের চলবে না।” এদিকে মহিলাদের সংসার সামলে তবে বিড়ি বাঁধার কাজে বসতে হয়। দিনের হিসাব ছশো-সাতশো বিড়িতে গিয়ে আটকে যায়। পাল্লা দিয়ে দৈনিক মজুরিও কমতে থাকে। মহিলারা তাই প্রত্যেকেই বলছেন, “জিনিসপাতির দাম বাড়ছে। এদিকে মজুরি বাড়ছে না। রোজ হাজার বিড়ি বাঁধাও যায় না।” এই ক্ষোভ অবশ্য সর্বত্র নেই। বোঝা গেল, সমস্যাটা এলাকাভিত্তিক। সেটুকু মিটে গেলে বিড়িশ্রমিকদের সামগ্রিক জীবনের বদল চোখে পড়ার মতোই।

আবার একটা ভোট সামনে। সরকারের থেকে তাহলে কী চান? সরকার যে তাঁদের কল্যাণ করতে পাশেই আছে সে-কথা তাঁরা বিলকুল জানেন। জনপ্রতিনিধির কাছে সুবিধা-অসুবিধার কথা বলতে পারলে নতুন আর কী চাওয়ার থাকে! দুঃখের দিনলিপি পেরিয়ে তাই হাসিমুখেই ভোটের দিকে তাকিয়ে আছেন মুর্শিদাবাদের বিড়িশ্রমিকরা।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement