দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জেরে মাকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল সিভিক ভলান্টিয়ার ছেলের বিরুদ্ধে৷ রবিবার সকালে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে আরামবাগের সালেপুর ১ পঞ্চায়েতের লালুর চক গ্রামে। মৃতার নাম দোলা কুণ্ডু (৪৮)৷ এই ঘটনায় স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলে রবীন কুণ্ডুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীনের বাবা শিশির কুণ্ডু চাষবাস করে সংসার চালান। রবীনের একটি ছোট বোনও আছে। আর্থিক অবস্থার কারণে ছোট থেকেই রবীন গোঘাটের কর্ণপুরে পিসির বাড়িতে থেকে বড় হয়। বর্তমানে সে আরামবাগ থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত। রবীন পিসির বাড়ি থেকে বিএ পাস করার পর বিয়ে করে। তার একটি সন্তানও রয়েছে। সম্প্রতি পিসির ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর থেকে পিসি অসহায় হয়ে পড়েন। পিসি মায়া কুণ্ডুর অভিযোগ, তাঁর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে রবীন তাঁকে দেখাশোনা করার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার জমি জায়গা টাকা পয়সা সব নিজের নামে লিখিয়ে নেয়।
পিসির সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পর রবীন আরামবাগে লালুর চকে তার নিজের বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে এসে ওঠে। এর ফলে পিসিও তার নিজের সংসার চালাতে না পেরে কিছুদিন বাদে আরামবাগে লালুর চকে বাপের বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেন। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, প্রায়শই রবীনের মা দোলা কুণ্ডুর সঙ্গে পিসি মায়া কুণ্ডুর অশান্তি হত। রবীন ঝগড়ার সময় পিসি ও পরিবারের অন্যান্যদের মারধর করতো বলে প্রতিবেশীদের অভিযোগ। রবিবার সকালে বাড়ির সামনের পুকুরের পাশে রবীনের মা ও পিসি দু’জনের মধ্যে তুমুল বিবাদ শুরু হয়ে যায়। রবীনের কাকা সঞ্জিত কুণ্ডু ও কাকিমা দোলা কুণ্ডু জানান, মা ও পিসিকে ঝগড়া করতে দেখে রবীন লাঠি নিয়ে দু’জনকে তাড়া করে। পিসি কোনোমতে পালিয়ে প্রাণ বাঁচালেও মা দোলা কুণ্ডু পালাতে পারেননি। হাতের সামনে মাকে পেয়ে তাঁর কানে সজোরে লাঠি দিয়ে আঘাত করে রবীন। কোনোমতে মা পুকুরঘাট থেকে বাড়ির দোরগোড়া অবধি এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, এরপরেও রবীন আহত মাকে বেধড়ক মারধর করে। ঘটনাস্থলেই দোলা কুণ্ডুর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় গ্রামের মানুষ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা আরামবাগ থানায় ঘটনার কথা জানিয়ে রবীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। এরপর পুলিশ গ্রামে এসে ঘটনাস্থল থেকে দোলা কুণ্ডুর দেহ উদ্ধার করে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান শেখ লালচাঁদ রবীনের বিরুদ্ধে খুনের আরামবাগ থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরামবাগ থানার পুলিশ ওই সিভিক ভলান্টিয়ার রবীন কুণ্ডুকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে।
[তিনমাস ধরে লাগাতার হয়রানি, অবশেষে রেলের পাস পেলেন জন্মান্ধ যুবক]
স্থানীয়দের অভিযোগ সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়ার পর থেকেই রবীন গ্রামবাসীদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে গুন্ডামি করত। স্থানীয়দের দাবি, সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের সময় তাদের ভাল করে কাউন্সিলিং করে কাজে নেওয়া উচিত। কারণ প্রশাসনের এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে এরা যুক্ত হচ্ছে যেখানে মানুষের ভাল মন্দ জড়িয়ে আছে। ফলে, এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের মানসিক বৈশিষ্ঠ না দেখে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেওয়া উচিৎ নয় বলেই মত স্থানীয়দের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.