সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: পরিবেশের স্বার্থে শালপাতায় জোর৷ শালপাতার থালা, বাটির কদরও বাড়ছে শহরে৷ তাই আগের থেকে কিছুটা হলেও আর্থিক রোজগার বেড়েছে আদিবাসী মহিলাদের৷ এই শিল্পকে আরও বাজারমুখী করতে এবার ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারও৷
দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লক কিম্বা কাঁকসা ব্লকের জঙ্গলমহল এলাকায় স্বাভাবিক উপায়েই বেড়ে ওঠে শালগাছ৷ বহু বছর ধরেই রীতিমতো বিঘার পর বিঘা শালগাছের জঙ্গলও রয়েছে এই অঞ্চলে৷ ক্রমাগত দূষণের বিষে নিষ্পেষিত হচ্ছে শিল্পাঞ্চল৷ দুর্গাপুরকে ‘গ্রিন সিটি’র আওতায় আনা হচ্ছে৷ প্লাস্টিকের দ্রব্য ব্যাবহারে ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে৷ তাই শহরে চাহিদা বাড়ছে শালপাতার তৈরি দ্রব্যের৷ আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্য সরকারের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এমএসএমই) দপ্তর৷ শালগাছের স্বাভাবিক জঙ্গল ছাড়াও বনদপ্তর কিম্বা ১০০ দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লকেও শালগাছ লাগানো হয়েছিল৷ তাই পাতা পেতে এই অঞ্চলে কোন সমস্যা নয়৷ আগে এই শালবনের সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত বন সুরক্ষা বাহিনী এই শালপাতার থালা অথবা বাটি নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করে সামর্থ অনুযায়ী বাজারে বিক্রি করত৷ এখন এই পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়েছে৷ আরও সংগঠিত ভাবে, যন্ত্রের দ্বারা শালপাতার দ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে৷ বন সুরক্ষা বাহিনীর শুধু মাত্র আদিবাসী মহিলাদের নিয়েই তৈরি হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ‘আনন্দধারা’৷
প্রতি ব্লকে অত্যন্ত দশটি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে৷ দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকেই গৌরবাজার ও প্রতাপপুর পঞ্চায়েত এলাকায় গড়ে উঠেছে শালপাতা ভিত্তিক স্বনির্ভর গোষ্ঠী৷ ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ব্লক প্রশাসনই৷ সেই ঋণের অর্থেই স্বনির্ভর গোষ্ঠী কিনছে মোল্ডিং মেশিন৷ কাঁচামাল বিনামূল্যেই তাঁরা সংগ্রহ করছেন শালের জঙ্গল থেকে৷ তারপর তা বিক্রি করা হচ্ছে শহরে৷ এতদিন নিজেরাই এই বিক্রি বা বাজারের সন্ধানে শহরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তরাঁয় আসতে হত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের৷ কোথাও বিক্রি হত আবার কোথাও শূন্য হাতেই ফিরতে হত তাদের৷ অনেকে এই ব্যবসা থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য পেশাতেও চলে গিয়েছিল৷ আদিবাসীদের এই পরম্পরার ব্যবসাকেই আরও উৎসাহ দিতে এবার এগিয়ে এল রাজ্যের এমএসএমই দপ্তর৷ সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলা স্তরে ছাড়াও দুর্গাপুরেও এই দপ্তরের বৈঠক হয়েছে৷ জেলার আধিকারিকদের নিয়েই বৈঠক করেছেন এই দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা৷ তাতে এই শালপাতার সামগ্রীকে আরও বাজারমুখী করে তুলতে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে৷ গোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র শালপাতার সামগ্রীকে বিক্রি করাতে সাহায্য করাই নয় এই সামগ্রীকে আরও উন্নত করতে সব ধরনেরই সাহায্য করা হবে বলে এমএসএমই দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে৷
ব্লক স্তরে ইতিমধ্যেই সেই নির্দেশ কার্যকর হতেও শুরু করেছে৷ দুর্গাপুরের ফরিদপুর ব্লকের বিডিও শুভ সিনহা রায় বলেন, “এই সামগ্রীর কাঁচামাল বাইরে থেকে কিনতে হয় না৷ অতি সহজেই এখানেই তা পাওয়া যায়৷ পরিবেশ বান্ধব এই শালপাতার সামগ্রীর চাহিদাও রয়েছে৷ শহরের প্লাস্টিকের ও থার্মোকলের বিকল্প হিসাবে এর চাহিদা বাড়ছেও৷ সহজেই মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া এই সামগ্রী বাজারজাত করতে এগিয়ে এসেছে রাজ্যের এমএসএমই দফতর৷” শালপাতা দিয়ে শুধু থালা ও বাটিই নয়, পাতাকে আর অন্য কিভাবে ব্যবহার করা যায় তাও খতিয়ে দেখছে এমএসএমই দপ্তর বলে জানা গিয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.