সঞ্জীব মণ্ডল, শিলিগুড়ি: দুটি ডাকঘর থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও পোস্টমাস্টার৷ ঘটনার জেরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে কালিম্পংয়ের জলঢাকা ও বানারহাটের চামুর্চিতে৷ পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে ডাক বিভাগও৷
জানা গিয়েছে, কালিম্পং জেলার জলঢাকা উপ-ডাকঘরের সাব পোস্টমাস্টার গগন রাই৷ তাঁর আগে তিনি একই পদে ছিলেন ডুয়ার্সের চামুর্চিতে। সাড়ে তিন মাস ধরে উধাও তিনি৷ গত ২৮ এপ্রিল থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে অফিসে আসা বন্ধ করে দেন তিনি৷ এর ফলে ওই অফিসে কাজকর্ম শিকেয় ওঠে৷ বাধ্য হয়ে মালবাজার প্রধান ডাকঘর থেকে ধীরেণ বর্মণ নামে একজনকে অস্থায়ীভাবে জলঢাকার ঝালংয়ের ওই উপ-ডাকঘরে পাঠানো হয়। গগণ রাইয়ের উধাওয়ের ঘটনা নিয়ে গত ৩ মে জলঢাকা থানায় জেনারেল ডায়েরি করা হয়। ধীরেণ বর্মণের নজরেই প্রথমে ওই গরমিল ধরা পড়ে। দেখা যায়, ডাকঘরে অনেকের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকলেও তা আপডেট করা হয়নি। এছাড়া টাকা তোলার স্লিপে ওভার রাইটিং। জাল সই করে বেশি অঙ্কের টাকা বসিয়ে অ্যাকাউন্টগুলি থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপরই এ নিয়ে ডাকঘরের তরফে থানায় এফআইআর করা হয়।
[সম্মান রক্ষায় খুনের চেষ্টা, হাওড়ায় দিদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালালো ভাই]
ইতিমধ্যেই জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তে নেমে দেখা ডাকঘর কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে, প্রচুর অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন গগন রাই। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী বলবীর মঙ্গর ওই ডাকঘরে দু’দফায় ১২ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন৷ একবছরের জন্য দু’লাখ টাকা৷ দু’বছরের জন্য দশ লাখ টাকা। মেয়াদের শেষের আগেই ওই টাকা তুলে নেন অভিযুক্ত। চাকরি জীবনের সঞ্চয়ের টাকা এভাবে খুইয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই প্রাক্তন পুলিশকর্মী। এভাবেই ইন্দ্রবাহাদুর ছেত্রীর আমানতের চার লাখ টাকা, ওমনাথ ভারতীর ছ’লাখ, মনবাহাদুর তামাংয়ের ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা সহ অন্তত দু’শো জনের আমানত হাতিয়ে নিয়েছে চম্পট দিয়েছেন তিনি৷ শুধু জলঢাকা নয় চামুর্চি উপ-ডাকঘর থেকেও প্রচুর লোকের সঞ্চিত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন অভিযুক্ত৷
[৪ ঘণ্টা প্ল্যাটফর্মেই পড়ে রক্তাক্ত দেহ, দেরিতে ঘুম ভাঙল রেল পুলিশের]
জানা গিয়েছে, কালিম্পংয়ের জলঢাকাতে বদলি হওয়ার আগে বানারহাটের চামুর্চি উপ-ডাকঘরে অন্তত চার বছর কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখানেও প্রচুর লোকের টাকা হাতিয়ে জলঢাকা উপ-ডাকঘরে সাব পোস্ট মাস্টার হিসাবে কাজে যোগ দেন। তাঁর আগে মালবাজার প্রধান ডাকঘরে কিছুদিন ছিলেন। জলঢাকা ও চামুর্চি উপ-ডাকঘর সংশ্লিষ্ট বিভাগের জলপাইগুড়ি সুপারের তত্ত্বাবধানে। ডাকবিভাগের জলপাইগুড়ির সুপার সুভাষ ডার্নাল বলেন, ঘটনাটি নজরে আসতেই বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ডাকবিভাগের মালবাজারে মহকুমা পরিদর্শক সীমা গুরুং জলঢাকা থানায় অভিযোগ করেছেন। ডাকবিভাগের জলপাইগুড়ির সহকারী সুপার অলোককুমার দাস সহ অন্যান্য আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে এসেছেন৷ ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনেছেন। যেসব ব্যক্তির টাকা খোয়া গিয়েছে, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে৷ কালিম্পং জেলা পুলিশের গরুবাথানের এসডিপিও এম রহমান জানান, এ ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্তর ভাইকে গ্রেপ্তার করা হলেও অভিযুক্তকে পাওয়া যায়নি। তাঁর খোঁজ চলছে। অভিযুক্ত পলাতক। বানার হাট থানার আইসি বিপুল সিনহা জানান, জলঢাকায় ঘটনাটি জানার পরই চামুর্চির ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। এরপর বানারহাট থানায়ও অভিযোগ হয়। তদন্ত চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.