সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাল তুমি আলেয়া!
সুন্দরবনের জলে-জঙ্গলে অদ্ভুত ভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছে কথাটা!
এমনিতেই সুন্দরবন বড় রহস্যময় জায়গা। আপনি যদি বেড়াতে গিয়ে ভাবেন সুন্দরবনের সবটুকু দেখে ফেলেছেন, তবে সে গুড়ে বালি!
আসলে তো ওটা সুন্দরবনই নয়! স্রেফ জঙ্গল আর খাঁড়ি শুরু হওয়ার আগে তার গা ঘেঁষে যে লোকবসতি রয়েছে, সেটাই ঘুরিয়ে দেখানো হয় পর্যটকদের।
কারণটা নেহাত বাঘের ভয় নয়। ভূতের ভয়ও!
শোনা যায়, সুন্দরবনের গভীরে, জলে-জঙ্গলে মাঝে মাঝেই দেখা যায় এক রহস্যময় আলো! যাকে আমরা চলতি কথায় ডেকে থাকি আলেয়া বলে! সেই আলেয়ার আলোই জেলেদের রাত-বিরেতে নিয়ে যায় মৃত্যুর কাছে!
সেই আলো দেখলেই না কি শরীরে-মনে এক ঘোরের সৃষ্টি হয়। বোধ-বুদ্ধি কাজ করে না। লোকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই আলো অনুসরণ করে এগোতে থাকে। তার পরে, হয় জলে ডুবে মৃত্যু হয় তাদের! নইলে অন্য কোনও রহস্যজনক কারণে! দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কিন্তু শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় না!
বিজ্ঞানীরা যদিও এই সব যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, আলেয়ার জন্ম হয় নানা গ্যাসের রাসায়নিক বিক্রিয়ায়। মূলত মিথেন আর ফসফরাসের! সুন্দরবনের নিচু জমির জলা জায়গায় এরকম গ্যাস সুলভ। ফলে, তাদের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় জলে মাঝে মাঝেই আলো জ্বলে ওঠাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কিন্তু, সুন্দরবনের মানুষ তা মানতে নারাজ। তাঁরা যুক্তি হিসেবে ফিরে যান অতীতের এক রাজবংশের গল্পে।
সেই কাহিনি বলে, এক সময়ে সুন্দরবন এবং তৎকালীন অঞ্চলে রাজত্ব করতেন রাজা শ্রুতঞ্জয়। তাঁর ছেলের নাম ছিল অলঞ্জয়। সৎ গুণের জন্য রাজকুমার ছিলেন সবার প্রিয়। তাই প্রজারা এবং রাজবংশের বাকিরা তাঁকে আলেয়া নামে আদর করে ডাকতেন!
দিনে দিনে বড় হলেন আলেয়া। পারদর্শী হলেন সব বিদ্যায়। এল রাজ্যাভিষেকের সময়। রাজবংশের নিয়ম মেনে তিনি চললেন শিকারে। কেন না শর্ত ছিল এটাই, নরখাদক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শিকার করে প্রমাণ দিতে হবে যোগ্যতার!
যথাসময়ে শিকারে গেলেন আলেয়া বাবার সঙ্গে। সুন্দরবনের খাঁড়ির মধ্যে দিয়ে ভেসে চলল তাঁদের বজরা। আলেয়া দেখতে পেলেন চাঁদের আলোয়, এক শাবককে সঙ্গে করে খাঁড়ির মুখে জল খাচ্ছে এক বাঘিনী। দেখতে দেখতে সন্তর্পণে তাকে ঘিরে ফেললেন আলেয়া এবং তাঁর দলবল। তার পর আর তাকে বধ করতে কতক্ষণ! জঙ্গলের গভীরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও রেহাই পেল না শাবকটিও! হত্যা করা হল তাকেও!
মনের আনন্দে রাজ্যের দিকে ফিরতে থাকলেন আলেয়া। কিন্তু, বিপদ ঘনিয়ে এল পরের রাতেই!
বাঘ শিকারের পরের রাতে দেখলেন আলেয়া, আরও এক বাঘিনী তার শাবককে নিয়ে জল খাচ্ছে। ধীরে ধীরে ঠিক আগের মতো তার দিকে এগিয়ে গেলেন রাজকুমার।
এবার কিন্তু আর আগের মতো ঘটনা ঘটল না! সবাই দেখল চোখের সামনে, রাজকুমারকে মুখে নিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল বাঘিনী আর তার শাবক!
বুড়ো রাজাও হাহাকার করতে করতে ফিরে এলেন ঘরে!
আলেয়ার অতৃপ্ত আত্মা কিন্তু থেকে গেল সুন্দরবনের জলে-জঙ্গলেই! নিজের অকালমৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আজও তিনি আলো হয়ে ঘুরে বেড়ান সেখানে। যাঁরা সেই আলো দেখতে পান, অনুসরণ করতে করতে তলিয়ে যান মৃত্যুমুখে।
অনেকে আবার বলেন, আলেয়া এতটাও খারাপ নন! তিনি না কি আলোর বেশে দেখা দিয়ে সাবধান করে দেন সবাইকে! সামনে বিপদ রয়েছে, তাই এগোতে বারণ করেন! যাঁরা সেই বারণ শোনেননি, তাঁরা জীবনের বিনিময়ে ভুল শুধরেছেন!
বিতর্ক থাকতেই পারে! কিন্তু কোনও দিন ভেবেছেন কি, আলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে এতখানি মৃত্যুর আঁধার?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.