দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: সুন্দরবনের এক ফসলি জমি দু-ফসলি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।সুন্দরবনের দ্বীপে-দ্বীপে ঘুরে মানুষের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জীবনযাত্রার মানের উপর কড়া নজর রাখতেন পদ্মশ্রী প্রাপক তুষার কাঞ্জিলাল। জল-জঙ্গলে থাকা আমজনতার কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় মাস্টারমশাই। বুধবার সকালে বুধবার সকালে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সেই তুষার কাঞ্জিলাল (৮৫)। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৩৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলায় তাঁর জন্ম। নোয়াখালিতে জন্ম হলেও বাবা-মায়ের হাত ধরে কলকাতায় চলে এসেছিলেন তিনি। তুষারবাবুর ছাত্রজীবন কেটেছিল বর্ধমান ও কলকাতায়। পড়াশোনা শেষ করে ১৯৬৭ সালে সুন্দরবনের গোসবার রাঙাবেলিয়া দ্বীপে চলে আসেন তিনি। এরপর সেখানে ১৯৭৫ সালে শুরু করেন রাঙাবেলিয়া টেগর সোসাইটি। সেই সময় থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে-দ্বীপে কাজ করতেন তিনি। সেখানকার মানুষজনের জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য অনবরত চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষের কাছে প্রাণের মানুষ ছিলেন তুষারবাবু। তবে শুধু সুন্দরবন নয় টেগর সোসাইটি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাতে কাজ শুরু করেন। এই কাজের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কারেও ভূষিত হন।
তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, রাঙাবেলিয়া স্কুলে দীর্ঘদিন তিনি শিক্ষকতা করেছেন। নিজের হাতে গড়ে তোলেন রাঙাবেলিয়া হাই স্কুল। সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের মানুষকে স্বনির্ভর করতে তাঁত বোনা, পশুপালন, মাছ চাষ, সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তিনি। টেগোর সোসাইটির কাজকর্ম দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন আসতেন। এই সংস্থার কাজকর্ম অনুপ্রাণিত হয়ে বহু বিদেশিরাও আসা যাওয়া করতেন। সুন্দরবনের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও চাষবাসের উন্নতির জন্য ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছিলেন তিনি। কলকাতার নিজের বাসভবনে বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবার সূত্রে খবর, বহুদিন ধরেই তিনি অসুখে ভুগছিলেন। আয়লার পর থেকেই সুন্দরবনের আসা-যাওয়া অনেকটাই কমে গিয়েছিল তুষারবাবুর। তবে সুন্দরবনের বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়নে অবদান আছে তুষারবাবু। তাঁর মৃত্যু খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ সুন্দরবন এলাকা।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, “বিশিষ্ট সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ, লেখক ও শিক্ষাবিদ তুষার কাঞ্জিলালের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে তিনি দীর্ঘদিন নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট-এর প্রাণপুরুষ। সমাজকল্যাণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মান। তাঁর প্রয়াণে সমাজসেবার ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.