রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে হাসপাতালে যেতে রাজি নয় কেউই। তার জেরে প্রায় এক ঘণ্টা দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রইলেন গুরুতর আহত এক ব্যক্তি। অবশেষে পরিবারের সদস্যরা এসে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে তেহট্ট থানার বেতাই বাজারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলেচুয়াপাড়া গ্রামের সুনীল চৌধুরী (খোকন) বেতাই বাজারের একটি দোকানে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে সাইকেল চালিয়ে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কে উঠতেই করিমপুরগামী একটি ছোট মালবাহী ট্রাক তাঁকে ধাক্কা মারে। সাইকেলটির দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে সুনীলবাবু গুরুতর আহত হন। তড়িঘড়ি স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা আহতকে তুলে মাথায় জল ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করলেও করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীকে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। কারণ ইতিমধ্যে তেহট্টে-১ ব্লকে ৪১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহত ব্যক্তির বাড়ি প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। ফোন মারফত তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজন এসে প্রায় এক ঘণ্টা পরে তাঁকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ফোনের মাধ্যমে বাড়িতে দুর্ঘটনার খবর দিলেও আহত ব্যক্তিকে করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কেউই রাজি হচ্ছিলেন না। তাই দুর্ঘটনার দীর্ঘ সময় পরে ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে ভরতি করায় পরিবারের লোকজন। প্রত্যক্ষদর্শী রজত বসু নামে এক বাইক চালকের সামনে ঘটনাটি ঘটে। তিনি জানান তার সামনে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাই অনেককে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে কেউ রাজি হচ্ছিলেন না। নাম জানাতে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন মানবিক দিক দিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্থকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে জেলার মধ্যে তেহট্ট-১ ব্লকে সর্বাধিক করোনা আক্রান্তের খবর মিলেছে। সেই কারণে পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি হিসেবে এমত অবস্থায় ইচ্ছা থাকলেও হাসপাতাল যেতে ভয় পাচ্ছেন তিনি।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকে আটক করেছে তেহট্ট থানার পুলিশ। তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এস এম আজাদ বলেন, কোন ব্যক্তির দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে তারপরের সময় থেকে শুরু হয়ে যায় গোল্ডেন আওয়ার। সেই সময় অবশ্যই সেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আনতেই হবে। কেননা ওই ব্যক্তি দুর্ঘটনায় ঠিক কতটা জখম তা সাধারণ মানুষ কেউই বুঝতে পারবেন না। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা জরুরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.