সৌরভ মাজি, বর্ধমান: চলে গিয়েছে ৫টা বছর। আইনের চোখে অপরাধীরা সাজাও পেয়ে গিয়েছে। অপরাধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু বাড়িটি। শুক্রবার ঘড়িতে তখন প্রায় ৪টে। একদল ছাত্রী সাইকেল নিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের সেই বাড়িটির পাশ দিয়ে যেতে যেতে একটু থমকে গেল। হাত তুলে দেখিয়ে বলল, ‘এই বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল।’
আজও সিল করাই রয়েছে দোতলা পাকাবাড়িটা। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের এই বাড়িরই দোতলা ভাড়া নিয়ে ডেরা বেঁধেছিল জামাত-উল- মুজাহিদিন (জেএমবি) বাংলাদেশ মডিউলের জঙ্গিরা। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর সেখানেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে দুইজনের মৃত্যু হয়। প্রথমে পুলিশ, তারপরে সিআইডি ও সবশেষে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তদন্তভার নেয়। তারপর থেকে এই বাড়ির দোতলায় ওঠার দরজা সিল করে দেয় এনআইএ। তবে নিচের তলার গ্যারাজ ঘর ও হাসান সাহেবের ছেলের চেম্বারের চাবি আগেই পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তদন্তে নেমে এনআইএ একের পর এক জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার সেই মামলার রায় দিয়েছে কলকাতার নগর ও দায়রা আদালত। ১৯ জনের সাজা ঘোষণা করে আদালত।
প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে এই বাড়ি সিল করাই রয়েছে। রায় ঘোষণার পর এবার বাড়ির চাবি হাতে পাওয়ার আশা করছেন বাড়ি মালিক হাসান আলি চৌধুরি। বিস্ফোরণ হওয়া বাড়িটির ঠিক উলটোদিকে রাস্তার ওপারে হাসান সাহেবের আরও একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানেই সপরিবারে থাকেন তিনি। এদিন বিকেলে তাঁর বাড়িতে অনেকেই ভিড় করেছিলেন। ওঠে বাড়ির চাবি ফিরে পাওয়ার প্রসঙ্গও। তবে
হাসান সাহেব জানাচ্ছেন, কোনও তাড়াহুড়ো নেই। এনআইএ যেদিন মনে করবে বাড়ির চাবি দেবে। তাঁর কথায়, “আসল কথা এমন একটি দেশবিরোধী কার্যকলাপের তদন্ত চালিয়েছে এনআইএ। তদন্তের স্বার্থেই সিল করা রয়েছে ওই বাড়িটি। এখন তো সাজাও হয়ে গিয়েছে জঙ্গিদের। এবার হয়তো বাড়ির চাবি ফেরত পাব। সেটা পেলে খুবই খুশি হব।”
একই কথা জানাচ্ছেন তাঁর ছেলে আসরাফ আলি চৌধুরিও। তিনি জানান, সরল বিশ্বাসে তাঁরা বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ধর্মীয় ছদ্মবেশ ধরে কেউ যে আমাদের এভাবে ঠকাবে ভাবতে পারিনি। ওরা শুধু আমাদের ঠকায়নি, খাগড়াগড় তথা বর্ধমানকে ঠকিয়েছে, আমাদের দেশকেও ঠকিয়েছে। ওদের জন্যই ৫ বছর ধরে বাড়িটি সিল করা রয়েছে। দেশদ্রোহীদের সাজা হয়েছে। এবার হয়তো আমরা বাড়ির চাবি পাব। পেলে খুব খুশি হব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.