তন্ময় মুখোপাধ্যায়: শুধু বৈষ্ণব নয় এখন রাস উৎসবে শাক্তদের প্রভাব সর্বত্র। তবে কীভাবে শুরু হয়েছিল রাধাকৃষ্ণের লীলা? একটি বাড়ির উৎসব থেকে তা কীভাবে গোটা রাজ্যে পৌঁছল তারই বর্ণনা রইল এই প্রতিবেদনে।
[শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা কীভাবে সর্বজনের হল? উৎসবের মাহাত্ম্য কী?]
জনশ্রুতি আছে পুরীর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর কাছে পূজিত হত এক কৃষ্ণ বিগ্রহ। যা দোলগোবিন্দ নামে পরিচিত ছিল। বারোভুঁইয়াদের অন্যতম বসন্ত রায় সেই মূর্তি অবিভ্যক্ত বাংলার যশোহরে নিয়ে আসেন। আনুমানিক ৪৩০ বছর আগে মানসিংহ যখন বাংলাকে আক্রমণ করেন তখন হিন্দু-মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে বসন্ত রায় চিন্তায় পড়েন। কৃষ্ণ বিগ্রহের পবিত্রতা রক্ষায় রায় পরিবার সেটি তাদের গুরুদেব শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। মথুরেশ বিগ্রহটি শান্তিপুরে নিজগৃহ গোস্বামীবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নাম রাখা হয় রাধারমণ।
মথুরেশের মৃত্যুর কিছুকাল পর একদিন রাধারমণের মূর্তি উধাও হয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে গোস্বামীবাড়িতে ত্রয়োদশ প্রজন্মের প্রতিনিধি সত্যনারায়ণ গোস্বামী জানান, রাধারমণ তথা কৃষ্ণমূর্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন পরিবারের তৎকালীন সদস্যরা। প্রচলিত বিশ্বাসে গোপিনীরা যেমন কাত্যায়নী ব্রত করেছিলেন ঠিক সেভাবে নিরুদ্দেশ কৃষ্ণমূর্তির ফিরে পাওয়ার আশায় মহিলারা কাত্যায়নী ব্রত পালন শুরু করেন। মন্দিরে চলতে থাকে ধরনা। এর কয়েক দিন পর পরিবারের এক সদস্য স্বপ্নাদেশ পান। জানতে পারেন দিকনগরে একটি দিঘির পারে মূর্তি রয়েছে। সেখানে খোঁড়াখুঁড়ির পর রাধারমণের সন্ধান মেলে। বিগ্রহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়। পরিবারের সদস্যরা মনে করেন একা আছেন রাধারমণ। তাই তাঁর সঙ্গে রাধিকার প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকে ৩৮ কেজি ওজনের অষ্টধাতুর মূর্তি তৈরি হয়। এই ঘটনা আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগের কথা। রাসপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বড় গোস্বামীবাড়িতে অনুষ্ঠান করা হয়। কার্তিক পূর্ণিমায় রাধারমণ এবং রাধিকার জন্য লৌকিকভাবে বিবাহের আয়োজন করা হয়। আর এই বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে বাংলায় রাসের প্রসার লাভ করে।
[নবদ্বীপ, শান্তিপুরের থেকে কেন আলাদা দাঁইহাটের রাসযাত্রা?]
সাধারণ লোকাচারে বিবাহের একদিন পর বউভাতের অনুষ্ঠান হয়। অনেকটা সেই ধাঁচে বধূ পরিচিতি অনুষ্ঠান হয় গোস্বামীবাড়িতে। রাধারমণের সঙ্গে শ্রীমতি যুক্ত হন। নববধূকে সাধারণের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। সত্যনারায়ণবাবু বলেন, অদ্বৈতাচার্যর সঙ্গে শান্তিপুরে চলে আসে খাঁ পরিবার। এরা গোস্বামী পরিবারের শিষ্য ছিল। রাধিকাকে সবার সঙ্গে পরিচয়ের জন্য করা হয় শোভাযাত্রার আয়োজন। যার জন্য অর্থ সাহায্য করে খাঁ বাড়ি। এই শোভাযাত্রাকে বলা হয় ভাঙারাস। শান্তিপুরের এই অনু্ষ্ঠান জগদ্বিখ্যাত। গোস্বামী বাড়ি এই প্রথা শুরু করার পর অন্যান্যরা তাদের বিগ্রহরা নিয়ে শোভাযাত্রায় বের হতে থাকে। বধূ পরিচিতি থেকে এই উৎসব ভাঙারাসে রূপান্তর হয়। রাস অঙ্গণে মহাদেব ঢুকে পড়ায় ভেঙে গিয়েছিল রাস। সেই থেকেই ভাঙারাসের উৎপত্তি।
ছবি: শ্যামল ঘোষ
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.