দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: দুষ্কৃতী হামলায় গুরুতর আহত ধনেখালির তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় বেরার (৫০) মৃত্যু হল শুক্রবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে৷ তৃণমূল নেতার মৃত্যুর খবর ধনেখালিতে পৌঁছানো মাত্র গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের আকার নেয়। উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ৷ বেশ কিছু দোকান ও ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে তারকেশ্বর, ধনেখালি ও গুড়াপ তিনটি থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ও ব়্যাফ পৌঁছায়৷ এই ঘটনায় নিহত তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় বেরার স্ত্রী শিপ্রা বেরা বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মী সহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে ধনেখালি থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত মৃত্যুঞ্জয় বেরা গোপীনাথপুর ২ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের বিদায়ী উপপ্রধান৷ ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি তৃণমূলের নির্বাচিত সদস্য। ভাল কাজের জন্য এলাকায় যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। গত বুধবার বিকেলে বিডিও অফিস থেকে বৈঠক সেরে বাড়ি ফেরার পথে ধনেখালির কুমরুলে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন তিনি৷ তাঁকে বেধড়ক মারধর করে দুষ্কৃতীরা তাঁর বাইক হাতিয়ে চম্পট দেয়৷ এই ঘটনার পর থেকেই কোমায় চলে যান মৃত্যুঞ্জয় বাবু৷ দীর্ঘ চিকিৎসার পর শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়৷
মৃত্যুর খবর আসার পরই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ কুমরুলে কয়েকশো তৃণমূল কর্মী সমর্থক রাস্তায় নেমে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে৷ খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের ৮ থেকে ১০টা বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। দোকানপাটেও ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। দমকলের ৪টি ইঞ্জিন এসে আগুন আয়ত্তে আনলেও উত্তেজনা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকলে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও ব়্যাফ নামানো হয়। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শিপ্রা বেরা তৃণমূল নেতা চিত্তরঞ্জন সাঁতরা, নিত্যানন্দ সাঁতরা, বিশ্বজিত সাঁতরা, কাজি মহম্মদ বাদশা, উজ্জ্বল পাত্র-সহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের অভিযোগ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। তাদের অভিযোগ, ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোপীনাথপুর ২ পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের ৫টি মৃত্যুঞ্জয়বাবুর অনুগামীরা জিতেছেন। ফলে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে তাঁদের দিকে পাল্লা ভারি ছিল। বোর্ড গঠন করা নিয়ে বিবাদের জেরেই খুন হয়েছেন বলে কর্মী সমর্থকদের দাবি। তবে, ধনেখালির পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি দপ্তরের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করেছেন। মন্ত্রী অসীমা পাত্র জানান, এর সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও যোগ নেই৷ তিনি অবিলম্বে এই ঘটনায় যুক্ত দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে বলেছেন৷ পাশাপাশি পুলিশের অনুমান কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে খুন হতে পারেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু৷
এই ঘটনায় অভিযুক্ত চিত্তরঞ্জন সাঁতরা ২০০৮ থেকে ১৩ গোপীনাথপুর ২ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ছিলেন। জানা গিয়েছে, সেসময় থেকেই মৃত্যুঞ্জয়বাবুর সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতার শুরু। স্থানীয়দের অভিযোগ সেসময় মৃত্যুঞ্জয়বাবুর সঙ্গে তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর তাকে বিয়ে করেন চিত্তরঞ্জন সাঁতরা। ২০১৩-তে মৃত্যুঞ্জয় উপপ্রধান হন। তখন থেকেই দুই জনের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে চিত্তরঞ্জন তৃণমূলের টিকিট পাননি। তার দাদা নিত্যানন্দ সাঁতরা তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে এদিন বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে, রাতের দিকে নিহত তৃণমূল নেতার দেহ ধনেখালিতে এসে পৌঁছালে ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশি টহল চলছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.