স্টাফ রিপোর্টার, বারাসত: রাজ্যপাল-রাজ্য সরকার সংঘাতই উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বড় বাধা। রাজ্যপালের সামনেই এহেন মন্তব্য করলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেসের প্রাক্তন অধিকর্তা পদ্মনাভন বলরাম। তিনি দেশের নামী বিজ্ঞানী। রবিবার পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে একথা বলেন ওই বিজ্ঞানী। ইতিমধ্যেই পদ্মনাভন বলরামের এই মন্তব্য ঘিরে কানাঘুষো শুরু হয়েছে। যদিও বিজ্ঞানীর বক্তব্যের সময় একপ্রকার নিরুত্তাপ ছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। বিষয়টি নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। যদিও এই মন্তব্যের রেশ ছড়িয়েছে শিক্ষামহলের অন্দরে।
কথা প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীও বেশ কয়েক বছর স্থায়ী উপাচার্য ছাড়া চলছে। ছয়ের দশক থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মান ক্রমশ পড়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এমন দৈন্যদশা আগে কখনও হয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করতে সরকারের অক্ষমতা থেকে স্পষ্ট উচ্চশিক্ষার মান কতটা নেমেছে। এই লিখিত ভাষণের বাইরে গিয়ে পি বলরাম আচমকা রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সংঘাতের বিষয়টি তুলে বিতর্ক উসকে দেন। তিনি বলেন, “বেশ কিছু রাজ্যে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সংঘাত লেগেই রয়েছে। যার ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ জায়গায় উপাচার্য নিয়োগ হলেও পরবর্তী সময় অনিবার্যভাবে নানা বিতর্ক ও অভিযোগ উঠে আসছে।”
প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাজ্যপাল বনাম সরকারের বিতর্ক প্রকাশ্যে এসেছে। এমনও হয়েছে রাজ্যপালের বক্তব্যকে খণ্ডন করতে বিবৃতি দিতে হয়েছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে। উল্লেখযোগ্যভাবে এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী উপস্থিত থাকলেও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরিকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, ব্যস্ততার কারণে এদিন তিনি আসতে পারবেন না।”
পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে দীক্ষান্ত ভাষণ দেন পি বলরাম। বিজ্ঞানের উদ্ভাবনায় দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম আইআইএস-এর প্রাক্তন অধিকর্তা ও প্রফেসর এমিরেটাস ছাড়াও ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলেজিক্যাল সায়েন্সেসের চেয়ার প্রফেসর তিনি। স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রথম সারির বিজ্ঞানীর এহেন মন্তব্যে নড়ে চড়ে বসেছে রাজনৈতিক মহল। উচ্চশিক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর এই মন্তব্য, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির দিকেই ইঙ্গিত করেছে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিকে পি বলরামের মন্তব্যে রাজ্যপালের প্রতিক্রয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি জানি না।”
রবিবার পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে স্বাগত ভাষণ দেন উপাচার্য বাসব চৌধুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির কথা বলার পাশাপাশি অস্থায়ী অশিক্ষা কর্মীদের স্থায়ীকরণের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকে যাঁরা পরিষেবা দিয়ে আসছেন, সেই অস্থায়ী অশিক্ষা কর্মীদের স্থায়ীকরণের বিষয়ে এখনও কিছু করা সম্ভব হয়নি। সরকার ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এদিন ৩০জনকে পিএইচডি ও ৪৬৫ জনকে স্নাতকোত্তরের মানপত্র দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.