সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ছয় লেনের সম্প্রসারিত ঝাঁ চকচকে দুই নম্বর জাতীয় সড়ক৷ মাঝে মধ্যেই রয়েছে ওভারব্রিজ। মাঝে ডিভাইডারের সবুজ গাছ গরিমা বাড়িয়েছে জাতীয় সড়কের৷ কিন্তু এই জাতীয় সড়কেই ব্রাত্য বাংলা ভাষা৷ এ নিয়ে ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে বাঙালির মধ্যে৷ ইংরেজি ও হিন্দির দাপটে বাংলা ভাষাটাই গায়েব ২ নম্বর জাতীয় সড়কের মাইলফলক থেকে৷ যাতায়াত করার সময় সাধারণ বাঙালি পরিবারের কাছে ভাষাগত সমস্যার জেরে রাস্তা ঠাহর করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে বলে উঠছে অভিযোগ৷ বিষয়টি যে প্রশাসনের নজরে আসেনি, তা নয়৷ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে৷
[ জানেন, এখন কীভাবে মুর্শিদাবাদে আয়োজন হয় নবাবি ইফতারের? ]
আসানসোল থেকে পানাগড় পর্যন্ত জাতীয় সড়ক চার লেন থেকে ছয় লেনের করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে৷ রাস্তার পাশে লাগানো হয়েছে মাইলফলক৷ বড় বড় মাইলফলকে জ্বলজ্বল করছে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় লেখা গন্তব্যের দূরত্ব৷ কিন্তু কোথাও এক ছটাক বাংলায় লেখা নেই৷ তাবলে কি ২ নম্বর জাতীয় সড়কের কোথাও বাংলায় কিছুই লেখা নেই? আছে৷ কিন্তু তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হচ্ছে না৷ ডিভিসি মোড়ের কাছে ফলক রয়েছে বাংলায়৷ তাতে একটি শব্দ বাংলায় লেখা রয়েছে। ‘গোপিনাথপুর’। কিন্তু এই জায়গাটি কোথায় তা জানে না অধিকাংশ দুর্গাপুরবাসীই৷ সড়কের মাঝে মাঝে এমন বাংলা ভাষায় জায়গার নাম লেখা থাকলেও তার অস্তিত্ব খুঁজতে পর্যটক তো দূর অস্ত, কালঘাম ছোঁটে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই৷ এইভাবে বাংলা ভাষাকে অপমান করছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এমনটাই অভিযোগ দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের৷
[ প্রতিবেশীর বাড়িতে চোলাই মদের দোকান, প্রতিবাদ করে আক্রান্ত দম্পতি ]
শুধু দুর্গাপুরই নয়, একই অভিযোগ এনেছেন আসানসোল ও পানাগড়ের বাসিন্দারাও৷ যাঁরা এই জাতীয় সড়ক ব্যাবহার করে কোথাও যাচ্ছেন, অন্য ভাষা না জানার অপরাধবোধে ভুগছেন তাঁরা৷ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এমন কারবারে ক্ষুব্ধ দুর্গাপুরের বুদ্ধিজীবীরাও৷ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুশীল ভট্টাচার্য জানান, “এইভাবে আঞ্চলিক ভাষাকে দুর্বল করার একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছে৷ যে কোনও অঞ্চলেই সেই অঞ্চলের ভাষাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে জনগনের স্বার্থে প্রচার করার চল আছে৷ এই ক্ষেত্রে কেন তা মানা হয়নি তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন৷”
বিষয়টি নজরে এসছে প্রশাসনেরও৷ দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা জানান, “আমরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি৷ তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷” দুই নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দুর্গাপুরের প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম হান্ডিক জানান, “প্রথম দিকে এই ভাষাগত সমস্যা হয়েছে৷ ওই ফলকগুলি খুলে ফেলা হবে৷ সেখানে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতেই লেখা থাকবে৷” ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরুও হয়ে গেছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: উদয়ন গুহরায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.