সৌরভ মাজি, বর্ধমান: খাগড়াগড়-কাণ্ডের মূলচক্রী জেএমবি জঙ্গি নেতা কওসর ওরফে বোমারু মিজানের চরম শাস্তি চাইছে বর্ধমান৷ তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার দাবি উঠেছে৷
এমনিতে কওসরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই ছিল না স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ সর্বদায় মুখ লুকিয়ে চলাফেরা করত সে ৷ মাত্র একবার কওসরের মুখদর্শনের ‘সৌভাগ্য’ হয়েছিল বাড়িমালিকের৷ আর সেই ভাড়াটিয়াই যে আসলে জঙ্গি, তা টেরই পাননি বাড়িওয়ালা৷ বাড়িমালিক তো বটেই, খাগ়ড়াগড়কাণ্ডে হতবাক হয়ে যান সকলেই৷ তবে দীর্ঘদিন অবশ্য কওসরের নাগাল পাননি এনআইআই-র তদন্তকারীরা৷ অবশেষে মঙ্গলবার ধরা পড়েছে ওই জঙ্গিনেতা. তার গ্রেপ্তারির খবরে স্বস্তি ফিরেছে বর্ধমান৷ শহরের বাবুরবাগান এলাকার বাড়ির মালিক-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটাই দাবি, কৃতকর্মের জন্য চরম শান্তি পাক কওসর ওরফে বোমারু মিজানের৷ তার ফাঁসি হোক৷
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর। খাগড়াগড়ে ভাড়া বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তার পরই প্রকাশ্যে আসে বাংলাদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি যোগের কথা। তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। খাগড়াগড়ে নুরুল হাসান চৌধুরির বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গি ডেরা গড়া হয়েছিল। আর সেখানেই আচমকা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুই জনের। ঘটনার তদন্তভার নেয় এনআইএ। ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেন তদন্তকারীরা । আর সেই সূত্রেই বর্ধমান শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গিদের আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। শহরের বাবুরবাগে ডেরা বেঁধেছিল কওসর। ওমর হোসেনদের বাড়ির দোতলার একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল কওসর। স্থানীয় একজনের সূত্রে বাড়ি ভাড়াও নেয় সে৷ কিন্তু বাড়ির মালিক বা অন্যরা তার মুখ দেখার সুযোগ পাননি বিশেষ।
মঙ্গলবার দুপুরে কওসরের গ্রেপ্তারের কথা জানতে পারেন ওমর হোসেন। মাত্র একদিনই নাকি কওসরের মুখ দেখেছিলেন তিনি! বাড়িমালিক ওমর হোসেন বলেন, “মাস দু’য়েক আমাদের বাড়িতে ভাড়া ছিল। দোতলার ঘরে থাকত। কিন্তু কোনদিনই তার মুখ দেখার সুযোগ হয়নি। একটা বাইক ছিল কওসরের। যখন বেরত দোতলা থেকে হেলমেট পরে বাইরে গিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যেত। আবার ফেরার সময় বাইক রেখে হেলমেট পরেই দু’তলার ঘরে চলে যেত। তাই তার মুখদর্শন হত না।” কিন্তু কোনওদিনই সন্দেহ হয়নি ওমরের। ভেবেছিলেন, পথ নিরাপত্তার কারণে হেলমেট ব্যবহার করত ওই জঙ্গি। ব্যতিক্রম ঘটেছিল একদিন। হেলমেট ছাড়াই নেমে বাইকে স্টার্ট দিয়েছিল কওসর।পরে অবশ্য ফের দোতলায় গিয়ে হেলমেট নিয়ে এসেছিল কওসর। সেই প্রথম ও সেই শেষ।
[বিশ্বভারতীর বিশেষ উদ্যোগ, দৃষ্টিহীনদের জন্য গীতাঞ্জলির ব্রেইল সংস্করণ]
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর পালিয়ে যায় কওসর৷ তদন্তে আসে ওমরদের বাড়িতে গিয়েছিলেন এনআইএ আধিকারিকরা। ৷ তবে তল্লাশি চালিয়েও বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি বলে খবর৷ স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন পরিবারের সদ্যসরা৷ তবে, বাড়ির মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়া কোনও হয়রানির মুখে পড়তে হয়নি বাড়ির মালিককে। বাড়িতে বসে ওমর বলেন, “কওসর ধরা পড়েছে শুনলাম। আমরা চাই আইনমাফিক কড়া শাস্তি হোক ওর।” একই কথা বলছেন এলাকার বাসিন্দারাও। এলাকায় এইভাবে যারা জঙ্গি ডেরা বানিয়েছিল তাদের প্রত্যেকেরই কড়া শাস্তি চাইছেন তাঁরা।
এনআইএ কওসরকে ধরার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র মাথা এই কওসর৷ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন,ম ভারতে জেএমবি কার্যকলাপ সে-ই । কওসর বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে সন্দেহ এনআইএ-র। আরও বড় নাশকতার ছক ছিল ওই জঙ্গির। সেখানে অত্যাধুনিক বোমা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল৷ আচমকা বিস্ফোরণে জঙ্গি ডেরার কথা সেই প্রথম প্রকাশ্যে আসে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.